২০২৫-২৬ অর্থবছরের জ্বালানি বাজেট নিয়ে সিপিডির উদ্বেগ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৬ জুন ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জ্বালানি বাজেট নিয়ে সিপিডির উদ্বেগ

দেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জ্বালানি বাজেট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের বেসরকারি থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বাজেটের জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি ঝোঁক দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসইযোগ্যতাকে হুমকিতে ফেলছে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত ‘২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: জ্বালানি রূপান্তরের অগ্রাধিকার নিয়ে ভাবনা’ অনুষ্ঠানে এই বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেন জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফৌজুল কবির খান। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিকার সমিতির (ক্যাব) সহসভাপতি অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি ব্যারিস্টার বিদ্যা অমৃত খান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মনোয়ার মোস্তফা এবং বিকেএমইএ’র সহসভাপতি মো. আখতার হোসেন অপূর্ব।

সিপিডির এই সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাজেট অন্তর্বর্তী সরকারের তিন শূন্য অঙ্গীকার—দারিদ্র্য শূন্য, নিঃসরণ শূন্য ও বেকারত্ব শূন্য—বিশেষ করে ‘নিঃসরণ শূন্য’ লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

এ ছাড়া, জরুরি সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তরে আরও পিছিয়ে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

চলতি বছরের ২ জুন উপস্থাপিত বাজেট উত্থাপন করা হয়। পরে ২২ জুন বাজেটটি অনুমোদন করা হয়। এবারের বাজেটের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘একটি ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা’। 

কিন্তু সিপিডির ভাষ্যে, এই বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানির চেয়ে জীবাশ্ম জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে—যেটি এই প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও তার গবেষক দলের পরিচালিত গবেষণায় বাজেট সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুতর সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে।

চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে—প্রথমত,  ভর্তুকি ও ট্যারিফ পরিবর্তনের পরও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) ভোক্তাদের খরচে লাভ করছে।

দ্বিতীয়ত, বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি বর্তমানে জাতীয় মোট ভর্তুকির ৪১ শতাংশ, যেখানে ২০২৫–২৬ অর্থবছরে এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা।

তাছাড়া, অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধান স্থবির হয়ে পড়ায় এলএনজি আমদানিতে ব্যবহৃত হচ্ছে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল।

একই সঙ্গে সক্ষমতা ও সরবরাহে অসামঞ্জস্যও দেখা দিয়েছে। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়লেও, ত্রুটিযুক্ত চাহিদার পূর্বাভাস ও জ্বালানি আমদানির সীমাবদ্ধতায় লোডশেডিং অব্যাহত রয়েছে।

এর পাশাপাশি, ২০২৪ সালের মার্চে চালু হওয়া বাজারভিত্তিক জ্বালানির মূল্য পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং এটি কর ও বিনিময় হারজনিত ধাক্কায় সহজেই প্রভাবিত হয়।

এ ছাড়াও, সৌর প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আনতে ব্যর্থ হয়েছে বিপিডিবি; ৩৭টি আগ্রহপত্র (এলওএল’স)বাতিল হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ খাতে পাওনাদি পরিশোধে স্বল্পমেয়াদি উচ্চ সুদের ঋণের ওপর নির্ভর করছে সরকার, যা দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।

ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানের মতো মূলনীতি পর্যালোচনার আওতায় থাকায় পরিকল্পনায় বিলম্ব ঘটছে।

কয়লা উত্তোলন ও এলএনজি আমদানিকে গুরুত্ব দিয়ে ‘নিঃসরণ শূন্য’ অঙ্গীকার থেকে বাজেট দূরে সরে গেছে বলেও উঠে এসেছে সিপিডির বিশ্লেষণে। 

জ্বালানি রূপান্তরের লক্ষ্য পুনরুদ্ধারে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি। এরমধ্যে রয়েছে— জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর ছাড় বাতিল করা, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক যন্ত্রপাতি আমদানিতে কার্বন কর ও শুল্কারোপ, জীবাশ্ম জ্বালানি ও এলএনজির সকল ভর্তুকি তুলে নেওয়া, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার করে ঘরোয়া গ্যাস অনুসন্ধান অগ্রাধিকার দেওয়া, অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র ধাপে ধাপে বন্ধ করা, আগাম অনুমোদনপ্রাপ্ত স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী চুক্তি পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে পরিমার্জন করা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং আমদানিকৃত সরঞ্জামে শুল্ক ও ভ্যাট কমানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য একটি ভর্তুকি তহবিল তৈরি, স্মার্ট গ্রিডে বিনিয়োগ বাড়ানো-যাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে সহজে যুক্ত করা যায়, স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিবর্তে স্বল্প সুদের বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়ন চাওয়া এবং ২০৪০ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা মাথায় রেখে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতি পর্যালোচনা করা।

আসন্ন অর্থবছর সরকারের জলবায়ু ও জ্বালানি রূপান্তর অঙ্গীকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে বলে মন্তব্য করেছে সিপিডি।