১৫ পুলিশ হত্যা মামলায় কারাগারে সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫০ এএম
১৫ পুলিশ হত্যা মামলায় কারাগারে সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস
ছবি : সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশ হত্যা মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

রবিবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এনায়েতপুর থানা আমলি আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক ওমর ফারুক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে এদিন দুপুরে বেলকুচি পৌর এলাকার কামারপাড়ার নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে যৌথবাহিনী। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা তাকে জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক হোসেন জানান, ৪ আগস্ট এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশ হত্যার ঘটনায় গত ২৭ আগস্ট পুলিশের দায়ের করা একটি মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বেলকুচি থানায় তার বিরুদ্ধে রোববার আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এনায়েতপুর থানা পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ১৫ পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনায় গত ২৭ আগস্ট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের চার নেতার নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও পাঁচ-ছয় হাজার জনকে। আর ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে চার কোটি টাকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বেলকুচি পৌর এলাকার কামারপাড়ার নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে আটক করে নিয়ে যায় যৌথবাহিনী। এরপর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সেখানে তল্লাশি চালায় তারা। তবে তার বাড়িতে তেমন কিছু না পেয়ে অভিযান শেষ করে চলে যায় যৌথবাহিনী।

এর আগে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে এনায়েতপুর থানা এলাকার এনায়েতপুর গ্রামে খাজা ইউনুস আলী (রহ.) এর দরবার শরিফে ১১০তম ওরস শরিফে সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস পৌঁছালে ১ নম্বর ফটক এলাকায় স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারী তার গাড়ি প্রতিরোধ করে। এসময় দুর্বৃত্তের ঢিলে গাড়ির একটি গ্লাস ভেঙে যায়। পরে দরবার শরিফের নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তিনি কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন।

এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন ইয়াজদানি বলেন, শনিবার রাতে আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ওপর হামলার বিষয়টি আমরা শুনেছি।

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকারিয়া হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের একটি ঘটনায় মামলা দিতে বাদী থানায় এসেছিলেন।

১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করলে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসকের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

আব্দুল লতিফ বিশ্বাস গত বছরের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। এই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কাছে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এরপর থেকে নিজ এলাকাতেই অবস্থান করছিলেন তিনি।