বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, ধুবনি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:৩০ জুলাই ২০২৫, ০২:৫৩ পিএম
বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, ধুবনি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ধুবনি এলাকায় একটি পুরনো বাঁধ ভেঙে গেছে, ফলে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।’

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাত ৯টায় হাতীবান্ধায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ মিটার যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই পানি বাড়তে থাকে এবং বিকেলের দিকে স্রোতের গতি বেড়ে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে দ্রুতগতিতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে লোকালয়ে। বর্তমানে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

নদীপাড়ের মানুষ ও পাউবো জানায়, কয়েক দিন ধরে ভারতে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় উজান থেকে আসছে পানি। ফলে তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়ে গেছে। কয়েক দিন ধরে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি, তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তা অতিক্রম করে।

গাতকাল রাত ৯টার দিকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিপ্রবাহ ক্রমেই বাড়ছে। ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার পরিবার। ডুবে গেছে তিস্তা চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ।

চরাঞ্চলের সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। যোগাযোগের মাধ্যম হয়েছে নৌকা আর ভেলা। উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ডুবে যেতে বসেছে আমন ধানসহ নানান ফসলের খেত। ভেসে যাচ্ছে চাষিদের মাছ।

লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ওপর দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে যাওয়ায় সামান্য পানি বাড়লে গোটা জেলার সব উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। এবারের উজানের ঢলের সৃষ্ট বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়লে বন্যার পরিধিও বাড়বে। পানি ঢুকবে নতুন নতুন এলাকায়। এবার তিস্তা নদীতে এখন পর্যন্ত বড় কোনো বন্যা হয়নি। তবে এটি বন্যায় রূপ নেবে বলে আশঙ্কা করছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি ছিল জমিতে। এখন ঘরের ভেতরে। গরু-ছাগল নিয়ে নিরাপদ জায়গায় যাচ্ছি।’

সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের শেলিনা বেগম বলেন, ‘ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব বিপদে আছি। চারপাশে পানি, কোনো উপায় নেই।’

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। নদীতীরবর্তী অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।

গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, ‘উজান থেকে পানি আসছে। ইতোমধ্যে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। নিচু এলাকার পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।’

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, ‘উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়ছে। যেভাবে পানি আসছে, তাতে বড় বন্যা হওয়ার ভয়ে আছি। এ বছর বড় কোনো বন্যা তো এখনো হয়নি।’

সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে হু হু করে বাড়ছে। এতে আমার ইউনিয়নের দেড় হাজারের বেশি পরিবার এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়ক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।’

লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘উজান থেকে পানি আসায় তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এর ফলে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘নদীতীরবর্তী এলাকার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় শুকনো খাবারসহ ভাঙনকবলিতদের জন্য ঢেউটিন মজুত রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় সরকারিভাবে প্রস্তুতি রয়েছে।’