যশোরের ভবদহে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দি শত শত পরিবার

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম
যশোরের ভবদহে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দি শত শত পরিবার

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে যশোরের অভয়নগরের ভবদহ এলাকায় ফের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার; তলিয়ে গেছে সবজি ও ধানের খেত, ভেসে গেছে মাছের ঘের।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নসহ নওয়াপাড়া পৌরসভার ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বহু নিচু এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা বিরাজ করছে।

এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে তারা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাল ও নদীতে অবৈধ নেট, পাটা ও কারেন্ট জাল বসিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছেন। ফলে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা জমে গেছে। আবার মৎস্যঘের মালিকরা বালুর বস্তা ফেলে মাছ আটকে রাখার চেষ্টা করছেন।

অভয়নগর উপজেলার সরখোলা গ্রামের শারমিন বেগম বলেন, ‘রাস্তা থেকে বাড়ি পর্যন্ত যেতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি হয়েও সরকারি কোনো সহযোগিতা মেলেনি।’

ডুমুরতলা গ্রামের ললিতা রাণী বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধন হবে কি? জন্মের পর থেকে ভবদহের একই চিত্র দেখে আসছি। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয় না।’

কোটা গ্রামের মৎস্যঘের মালিক দেলবার বলেন, ‘৩০০ বিঘা জমিতে পাশাপাশি দুটি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ঘেরে অর্ধকোটি টাকার মাছ ছিল।’

অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার ১২৯ হেক্টর আবাদি জমি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ২৫ হেক্টর আউশ ও ৪৫ হেক্টর আমন ধান, ৫৮ হেক্টর সবজি ও ১ হেক্টর জমির মরিচ রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না হলে উপজেলাব্যাপী ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় কৃষি ও কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির ফলে উপজেলার পায়রা, চলিশিয়া, শ্রীধরপুর, সিদ্ধিপাশা ও প্রেমবাগ ইউনিয়নে ২৮৪টি মাছের ঘের (২২৫ হেক্টর) ভেসে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি তিনি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুশফিকুর রহমান জানান, সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জলাবদ্ধতার বিষয় জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থপ্রতিম শীল বলেন, ‘ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকায় পানিবন্দি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। নদী, খাল ও বিলে অবৈধভাবে নেট, পাটা ও অন্যান্য জাল ফেলে যারা পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তাছাড়া আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করেছে বলেও জানান তিনি।