ময়মনসিংহে রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর


ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল এলাকায় জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব ওয়ালিদ আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে হামলা করে নির্মাণাধীন স্থাপনা ও পুরোনো বাড়ির ভেতরের আসবাব ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব ওয়ালিদ আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে গিয়ে নির্মাণাধীন ইটের দেয়ালগুলো ভেঙে দেয়। পরে পুরোনো ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে আসবাব ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুরের কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন সংগঠনের আহ্বায়ক আ জ ম ওয়ালিউল্লাহ ওলি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িটিকে “দালাল মহল” আখ্যায়িত করেন বৈষম্যবিরোধীরা। সম্প্রতি বজলুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ১২ বছরের জন্য বাড়িটি ভাড়া নিয়ে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
গত ২৩ এপ্রিল বাড়ির সামনে মানববন্ধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তারা বাড়িটিতে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানান। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের দাবি উপেক্ষা করে রেস্টুরেন্টের জন্য স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকায় বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ২টার দিকে বৈষম্যবিরোধীরা সেখানে হামলা চালান।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহের যুগ্ম সদস্যসচিব ওয়ালিদ আহমেদ বলেন, “শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে রওশন এরশাদ মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ৫ আগস্টের পর রওশন এরশাদের বাড়িটি ‘দালাল মহল’ আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু বাড়িটিকে বাণিজ্যিক ভবন বানানোর পাঁয়তারা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিলেও কাজ বন্ধ হয়নি। এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে স্থাপনা ভেঙে দিয়েছেন। এখানে রেস্টুরেন্ট করতে দেওয়া হবে না। এখানে মহানগর শাখার আহ্বায়ক আ জ ম ওয়ালিউল্লাহ ওলি আছেন। তিনিও ভাঙচুরে সমর্থন দিয়েছেন।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগর শাখার সিনিয়র সদস্যসচিব ফুয়াদ খান বলেন, “ভাঙচুরের সময় আমি নগরের জয়নুল আবেদীন উদ্যানে একটি কর্মসূচিতে ছিলাম। তবে আমাদের কিছু নেতাকর্মীসহ বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে শুনেছি। কারণ, জাতীয় পার্টি বিগত সময়ে দালালি করেছে। ফলে সব শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ আছে।”
রেস্টুরেন্টের মালিক বজলুর রহমান বলেন, “রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়ি হওয়ায় দালাল মহল আখ্যা দিয়ে এখানে ভাঙচুর করা হয়েছে। নির্মাণশ্রমিকদের জিনিসপত্র দিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে সেগুলো নিয়ে যায় তারা। ছাত্রদল থেকে বৈষম্যবিরোধী নেতা হওয়া ওয়ালিদ আহমেদের নেতৃত্বে এ হামলা করা হয়।”
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, “হামলা-ভাঙচুরের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ভবনটিকে ‘দালাল মহল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। বাণিজ্যিক স্থাপনার নির্মাণকাজ চলায় ক্ষোভ থেকে সেখানে গিয়ে ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়।”
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, “বাড়িটি ঘিরে ছাত্র-জনতার ক্ষোভ আছে। এজন্য সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা ঠিক নয়। যেহেতু পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, সেখানে রেস্টুরেন্ট না করাই উচিত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা স্মারকলিপি দিলেও অনেক কাজের মধ্যে হয়তো ভুলে গিয়েছিলাম। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”