কোনো মুসল্লির মৃত্যু হলে মৃতের গোসল, কাফন, জানাজা, লাশ বহন ও দাফন করা অপর মুসলমানের জন্য অবশ্যক হয়ে যায়। কেউ মারা গেলে যত দ্রুত সম্ভব এই কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়।
সিলেটের বিয়ানীবাজারে কারও মৃত্যুর খবর পেলেই তড়িঘড়ি করে খুন্তি-কোদাল, দা, চাকু, স্কেল ও করাতসহ কবর খোঁড়ার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে ছুটে যান ১০-১২ জন তরুণে একটি দল। কবর খোঁড়ার পর মৃত ব্যক্তির পরিবারের কারও কাছ থেকে নেন না কোনোরকম পারিশ্রমিক বা যাতায়াত খরচ।
এলাকার সবার কাছে বিশেষ সম্মানের পাত্র তারা। পরিচিতি পেয়েছেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ হিসেবে। কবর খোঁড়ার নিখুঁত, সুদক্ষ ও সুনিপুণ কারিগর হিসেবে তারা সর্বত্র পরিচিতি পেয়েছেন। এমন আত্মিক কাজে তৃপ্ত হয়ে তারা বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কসবা-খাসা গ্রামে গড়ে তুলেছেন ‘শেষ ঠিকানা’ নামের একটি সংগঠন।
বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৫০-এর কাছাকাছি। এক দিনে একাধিক কবর খোঁড়ার প্রয়োজন হলে তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে যান। মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে বাঁশ কাটা, কবর খোঁড়া শেষ করে দাফন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন তারা।
সংগঠনের ডায়েরিতে লেখা তথ্য অনুযায়ী, তারা এ পর্যন্ত ৪ হাজারের ওপর কবর খুঁড়েছেন। শুধু দুই গ্রামেই নয়, পৌরশহরে কোথাও মৃত্যুর খবর শুনলেও ছুটে যান সংগঠনটির সদস্যরা।
নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারের জন্য সংগঠনের সদস্যদের নিয়মিত চাঁদায় তারা মাইক সেট কিনেছেন। দূর-দূরান্তে যেতে এখন একটি অটোরিকশাও কেনার স্বপ্ন তাদের।
গ্রামবাসী জানায়, শেষ ঠিকানার সদস্যরা এই অঞ্চলের মানুষর হৃদয় জয় করেছেন। তারা দৈনন্দিন কাজ ফেলে মৃত মানুষকে চিরশয্যায় শায়িত করার কাজ করছেন। চাহিদাবিহীন এই সংগঠনের সদস্যদের নীতি-নৈতিকতা এলাকার সবাইকে মুগ্ধ করে।
তাদের তথ্যমতে, গত ১০ বছর ধরে শেষ ঠিকানার সদস্যরা এলাকায় কবর খোঁড়ার কাজ করে আসছেন। রাত-দিন যেকোনো সময় তারা কবর খুঁড়তে বের হন। আবহাওয়া যেমনই থাকুক, সামাজিক এই দায়িত্বের দায় নিয়ে তাদের কর্ম চলে অবিরাম।
শেষ ঠিকানার সভাপতি ছরওয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের টাকা-পয়সার কোনো লোভ নেই। কবর খুঁড়ে কারও কাছ থেকে হাদিয়া বা টাকা পয়সা নেওয়া হয় না। এমনকি অনুষ্ঠানেও খেতে যাই না। মৃত ব্যক্তির কবর খোঁড়া আমাদের নেশা হয়ে গেছে।’
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমদ বলেন, ‘শখের বশে কবর খুঁড়তে খুঁড়তে এখন এটা নেশা হয়ে গেছে। কোথাও মানুষ মারা যাওয়ার খবর পেলেই মনটা ছটফট করে। কবর খোঁড়ার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে ছুটে যাই।’