খাগড়াছড়িতে এবার আম বাজারজাতকরণে নির্ধারিত তারিখ নেই


এ বছর খাগড়াছড়ি জেলায় আম বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়নি। কৃষকরা তাদের বাগানে উৎপাদিত আম পরিপক্ব হলেই বাজারজাত করতে পারবেন বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে একই জাতের আমও বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পরিপক্ব হয়। পাহাড়ের উপরি জমিতে অবস্থিত বাগানগুলোর আম আগে পাকতে শুরু করে। তাই যদি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হয়, তাহলে আগাম পরিপক্ব হওয়া আম বাগানের চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।’
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি সম্প্রারণ বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আম পরিপক্ব হলেই বাগান মালিক ও কৃষকরা আম বাজারজাত করতে পারবেন। তবে কেউ যেন অপরিপক্ব আম বাজারে না আনতে পারে, সে বিষয়ে তদারকি চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় আম চাষি মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমার সাতটি বাগান রয়েছে। এ বছর আবহাওয়ার কারণে কিছু বাগানের আম সময়ের আগেই পেকে যাবে। চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে একটি বাগানের আম্রপালি আম পুরোপুরি পেকে যাবে বলে আশা করছি।’
তবে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি আবু তাহের মোহাম্মদ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে যৌক্তিক একটি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করলে ভোক্তারা প্রতারিত হবে না। নাহলে এখন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগ নেবে। অপরিপক্ব আম কেমিক্যাল দিয়ে আগাম পাকিয়ে বাজারজাত করবে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’
এক্ষেত্রে বাজারে ভোক্তার অধিকার রক্ষায় প্রশাসনের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ক্যাবের যৌথ নজরদারির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বাগান মালিকদের অনেকের অভিযোগও এমনই। তাদের দাবি, গত বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পাহাড়ের বাগানের আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদাসীনতার কারণে অপরিপক্ক আম অসাধু ব্যবসায়ীরা কেমিক্যাল দিয়ে আগাম পাকিয়ে বিক্রি শুরু করবে।
বাগান মালিকদের অভিযোগ, কৃষি সম্প্রারণ বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ বছিরুল আলম এ বিষয়ে এখনো কোনো বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেননি। এমনকি খাগড়াছড়ির আম বাগানের কয়েকজন মালিক কৃষি সম্প্রারণ বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ চেয়েও কোনো সিদ্ধান্ত পাননি। কৃষি কর্মকর্তা আলোচনার জন্য তাদের সময় দিতে পারেননি।
অবশ্য, প্রতি বছর আমের মৌসুমে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি এলাকায় আগাম ফলন হওয়ায় নির্ধারিত বাজারজাতকরণ তারিখ নিয়ে স্থানীয় চাষিদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। এবারের এই সিদ্ধান্ত কিছু কৃষকের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও ভোক্তা পর্যায়ে প্রতারণার আশঙ্কা থেকেই যায়।
পাহাড়ি মাটির বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ এবং আবহাওয়া উপযোগী বলে খাগড়াছড়ি জেলায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় সুস্বাদু আম্রপালি জাতের আম। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বাগানে এ বছর ৫৪ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে পার্বত্য এই জেলার মানুষের আমের চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ করা যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।