মোহাম্মদপুরে জোড়া খুন, জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম
মোহাম্মদপুরে জোড়া খুন, জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য
নিহত মা-মেয়ে (বায়ে) ও ভবন থেকে তরুণীর বের ছবি
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বাসায় মা ও মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালের দিকে শাহজাহান রোডের ৩২/২/এ বাসার সপ্তম তলার ৭/বি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে।
 
নিহতরা হলেন—লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ (১৫)।
 
ঘটনার পর ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। ফুটেজে দেখা যায়, সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে সাদা সালোয়ার কামিজ, প্রিন্টের ওরনা ও পায়ে কেডস পরে ভবনের সিঁড়ি দিয়ে ধীরস্থিরভাবে নেমে আসছেন এক তরুণী। তার পিঠে ব্যাগ ও মুখে মাস্ক ছিল। এ সময় ভবনের প্রধান প্রবেশপথে বসে ছিলেন তিনজন। ওই তরুণী বের হওয়ার সময় তাদের একজন উঠে দাঁড়িয়ে গেট খুলে দেন। পরে ভবন থেকে বেরিয়ে ওই তরুণী অটো রিকশায় উঠে চলে যান।
 
পুলিশের ধারণা ওই তরুণী নিহত নাফিসাদের বাসার গৃহকর্মী। বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে হত্যার পর নাফিসার পোশাক পরেই বের হয়ে যায় সে। 
 
পুলিশ জানায়, মাত্র চার দিন আগে ভবনের দারোয়ান মালেকের মাধ্যমে ওই মেয়েটি বাসায় আসে। পরে তার মাধ্যমে নিহত লায়লা আফরোজের বাসায় কাজ নেয় গৃহকর্মী হিসেবে। নিজের নাম আয়েশা বলে পরিচয় দেয় সে। মা-মেয়েকে হত্যার পর নিহত নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে সে বের হয়ে যায়।
 
ভবনের বাসিন্দারা জানায়, নিহত লায়লা আফরোজ (৪৮) গৃহিণী। মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাফিসার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম পেশায় শিক্ষক। তিনি উত্তরার সানবিমস স্কুলের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক।
 
ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সকাল ৭টার দিকে নাফিসার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম স্কুলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে আয়েশা বোরকা পরে সাততলায় ওঠে এবং ৯টা ৩৫ মিনিটে নাফিসার স্কুল ড্রেস, ব্যাগ ও মাস্ক পরে ভবন থেকে বের হয়ে যায়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আজিজুল ইসলাম বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান।
 
নিহত নাফিসার বাবা জানান, আমাদের বাসায় একজন কাজের মহিলা দরকার ছিল। সাধারণত গেটে অনেকেই কাজের সন্ধানে আসে। চার দিন আগে একটি মেয়ে আসে। বোরকা পরিহিত মেয়েটি আমাদের বাসার দারোয়ান খালেকের কাছে কাজের সন্ধান করলে সে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর আমার স্ত্রী মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেয়। পরে আমি স্ত্রীর মুখে শুনেছি, মেয়েটার নাম আয়েশা। বয়স আনুমানিক ২০ বছর। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর। জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার শরীরেও আগুনে পোড়ার ক্ষত রয়েছে।
 
ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ। আলমারি ও জিনিসপত্র তছনছ।
 
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, মাকে হত্যার পর ওই মেয়েটি দৌড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় হয়তো ইন্টারকমে সিকিউরিটি গার্ডকে ফোন দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে ইন্টারকমের লাইনটি খোলা পাওয়া যায়। মেয়েটি খুব সুন্দরভাবে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে বাথরুমে গিয়ে গোসল করে নিজের শরীরের সমস্ত রক্ত পরিষ্কার করে নাফিসার স্কুলের ড্রেস পরে নির্দ্বিধায় গেট দিয়ে বেরিয়ে যায়। তল্লাশি করে বাথরুমে একটি সুইচ গিয়ার ও একটি ধারালো অস্ত্র পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছুরি দুটি দিয়েই মা-মেয়েকে হত্যা করেছে গৃহকর্মী আয়েশা। এই ঘটনায় ওই বাসার দারোয়ান মালেককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
 
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান জানান, পুলিশ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খবর পায়। মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে নেওয়ার পর সে মারা যায়। পরে লাশ দুটি সুরতহালের পর ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পেয়েছি, সেসব যাচাই-বাছাই চলছে।

গৃহকর্মীর প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি, হত্যার আগে-পরে তার উপস্থিতি ও অ্যাকটিভিটিজ বিশ্লেষণ করে পরবর্তী তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাব।

বাসার ভেতরের অবস্থার বিষয়ে পুলিশ বলছে, বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত রয়েছে, মেঝেতে এবং দেওয়ালে রক্তের দাগ রয়েছে। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায় রয়েছে। যা মনে করছি, প্রাথমিকভাবে কিছু খোয়া যেতে পারে। সিসি ক্যামেরা ফুটেজে আমরা একজনকেই দেখেছি, পরে দেখব আশপাশে আরও কেউ ছিল কি না।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করেছে এবং হত্যাকারী ফ্রেশ হয়েছে বাথরুমে— এমন আলামত পাওয়া গেছে।
 
বিপি/ আইএইচ