ডাকসু: নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন ঢাবি উপাচার্য

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৪১ পিএম
ডাকসু: নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন ঢাবি উপাচার্য

চলতি মাসের ৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট অরক্ষিতভাবে নীলক্ষেতে ছাপানোসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে ডাকসু নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। তবে নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর তথ্যটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সহযোগী ভেন্ডর অবহিত করেনি বলে দাবি করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।

রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অসঙ্গতি ও ব্যালট পেপার সংক্রান্ত অভিযোগের জবাব দিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

উপাচার্য লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা জানিয়েছিলাম, সব নিয়ম মেনে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে একটি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। রেকর্ডসংখ্যক ভোটার ও প্রার্থীর বিবেচনায় দ্রুততম সময়ে নির্ধারিত পরিমাণ ব্যালট ছাপানোর স্বার্থে আমাদের মূল ভেন্ডরের সঙ্গে আলোচনা করে সমযোগ্য একটি সহযোগী/অ্যাসোসিয়েট প্রতিষ্ঠানকে একই টেন্ডারের অধীনে কাজে সম্পৃক্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘নীলক্ষেতে ২২ রিম কাগজ দিয়ে ৮৮ হাজার ব্যালট ছাপানও হয়। যা থেকে প্রিন্টিং, কাটিং, প্রি-স্ক্যান পর্ব শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যালট প্যাকেটে সিলগালা করে ৮৬,২৪৩টি ব্যালট সরবরাহযোগ্য করা হয় এবং অতিরিক্ত ব্যালটগুলো প্রচলিত পদ্ধতিতে নষ্ট করে ফেলা হয়। ভেন্ডর আরও জানায় যে, নীলক্ষেতে কাটিং শেষে প্রি-স্ক্যান ও পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য তারা তাদের মূল অফিসে এনে প্রি-স্ক্যান সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট পরিমাণে প্যাকেটে ভরে সিলগালা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে সরবরাহ করে। তারা ব্যালট প্রস্তুতকরণ প্রক্রিয়ায় ও আনা নেওয়ায় চুক্তি মোতাবেক সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ব্যস্ততার কারণে কর্তৃপক্ষকে নীলক্ষেতে ব্যালট প্রিন্টিং ও কাটিংয়ের বিষয়টি জানাতে ভুলে যায় বলে স্বীকার করে।’

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘ব্যালট পেপার ছাপানোর স্থান বা সংখ্যা সুষ্ঠু নির্বাচনকে কোনোভাবে প্রভাবিত করে না। কারণ, ব্যালট পেপার ভোটের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করতে কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। ব্যালট পেপারটি ছাপানোর পর তা নির্দিষ্ট পরিমাপে কাটিং করতে হয়। তারপর সুরক্ষা কোড আরোপ করে ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যান করে তা মেশিনে পাঠযোগ্য হিসেবে প্রস্তুত করতে হয়। এরপর চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার সীলসহ স্বাক্ষর ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরযুক্ত হলেই তা ভোট গ্রহণের জন্য উপযুক্ত হয়। এ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই পূর্ণ সর্তকতার সঙ্গে (DUE DILIGENCE) ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।’

ব্যালট পেপারের হিসাব জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘কার্যাদেশ অনুযায়ী, উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় চূড়ান্তভাবে ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৪টি ব্যালট ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হয়। মোট ভোটার ৩৯,৮৭৪- ভোটারপ্রতি ছয়টি ব্যালট। মোট ভোট দিয়েছেন ২৯,৮২১ জন ভোটার। মোট ব্যালট ব্যবহার করা হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৬টি। অবশিষ্ট ব্যালট ৬০ হাজার ৩১৮।’

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষাপটে সিসিটিভি ফুটেজ এবং ভোটারদের স্বাক্ষরিত তালিকার বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। এ বিষয়ে ইতোপূর্বে আমরা বিস্তারিত জানিয়েছি যে, কোনও প্রার্থী যদি সুনির্দিষ্ট কোনও সময়ের/কোনও একটি প্রাসঙ্গিক ঘটনা পর্যালোচনা করার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চান তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত বিশেষজ্ঞ বা মনোনীত ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত কোনও স্থানে তা দেখতে বা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘ভোটারদের স্বাক্ষরযুক্ত ভোটার তালিকা দেখানোর বিষয়ে আমরা পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে অধিকতর আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে তাদের পরামর্শ নিম্নরূপ: কোনও প্রার্থী যদি নির্দিষ্ট ও যৌক্তিক কারণে নির্দিষ্ট কারও স্বাক্ষর পর্যবেক্ষণ করতে চায় সেক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত বিশেষজ্ঞ বা মনোনীত ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে দেখানো যেতে পারে।’