এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে এবার ক্লাসরুমে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৪ পিএম
এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে এবার ক্লাসরুমে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ক্লাসে প্রচারণা চালিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চান।

তবে ফরহাদ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফরহাদ ক্লাস চলাকালে প্রচারণা চালাননি, বরং ক্লাস শুরুর আগেই উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের শুধু সালাম দিয়ে চলে যান।

ক্লাসরুমে উপস্থিত থাকা ২০২৪-২৫ শিক্ষার্থী জাবেদ রায়হান বলেন, ফরহাদ দরজা খুলে উঁকি দেন। তখন দেখেন স্যার ক্লাসে। যেহেতু আই কন্টাক্ট হয়ে গেছে তিনি কথা না বলে যেতে পারনে না। তাই তিনি স্যারকে সালাম দেন, এবং ইন্টারাপ্ট কারার জন্য সরি বলেন, সকলের কাছে দোয়া চেয়ে বের হয়ে যান। তিনি কারো কাছে ভোট চাননি।”

ওই সময় উপস্থিত সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের লেকচারার রনি মৃধা বলেন, “আমি তখনও ক্লাস শুরু করিনি। যেইমাত্র আমি প্রবেশ করেছি, সেও প্রায় একই সময়ে প্রবেশ করে।”

তিনি বলেন, ক্লাস ফাঁকা ভেবে সে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। তখন ফরহাদ আমাকে সরি বলে। শিক্ষার্থীদের কাছে দোয়া চেয়ে সে বের হয়ে যায়, সে কারো কাছে ভোট চায় নি।

‘আর সবসময়ের মতো ক্লাস শুরুর আগেই স্লাইড ওপেন করা ছিল। ফলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সে ক্লাস চলাকালে প্রবেশ করেনি,’ বলেন মৃধা।

এ বিষয়ে এস এম ফরহাদ বলেন, ‘সমাজকল্যাণ ইন্সটিটিউটে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে লম্বা ব্রেক থাকে। শিক্ষার্থীরা তখন আড্ডা দেয়, গল্প করে। ভেবেছিলাম হয়ত ক্লাস চলছে না। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে আমি সেখানে লিফলেট বিতরণ করিনি, কারো কাছে ভোটও চাইনি। এখন একটি ছবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’ডাকসুর আচরণবিধির ৬(চ) ধারায় বলা হয়েছে— পাঠদান বা পরীক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে এমন স্থানে (যেমন শ্রেণিকক্ষ, পাঠকক্ষ, পরীক্ষার হল ইত্যাদি) সভা-সমাবেশ বা নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। শ্রেণিকক্ষ ও করিডোরে মিছিলও নিষিদ্ধ।

এ বিষয়ে ডাকসুর আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত নই। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

ডাকসু ক্যাফেটেরিয়াকে প্রচারণা কার্যালয় বানিয়েছে ছাত্রদল, অনুমতি নেয়নি কর্তৃপক্ষের

ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া দখল করে বহিরাগত এনে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিরুদ্ধে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রার্থী সমর্থন ও প্রচারণায় বহিরাগতদের ব্যবহার এবং অনুমতি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষকে প্রচারণা কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করায় এ নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিন ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় দেখা যায়, দুজন বহিরাগত ছাত্রদলের নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে অবস্থান করছেন। সাংবাদিকরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে একজন নিজেকে খুলনা থেকে আসা এবং অপরজন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেন।

তারা জানান, ছাত্রদল-সমর্থিত জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিমের কাছে এসেছেন। নাম জানতে চাইলে তড়িঘড়ি করে কক্ষ ত্যাগ করেন তারা।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কেবল প্রার্থী বা ভোটাররা প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন; বহিরাগতরা কোনোভাবেই অংশ নিতে পারবেন না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মাত্রই জেনেছি। বহিরাগতদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে মোবাইল টিম পাঠানো হয়েছে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাফেটেরিয়ার ভেতরে ছাত্রদলের প্যানেলের নির্বাচনী পোস্টার ও লিফলেটের স্তুপ সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক ফারজানা বাসার বলেন, ‘আমার কাছ থেকে কোনো লিখিত অনুমতি তারা নেয়নি। তবে একজন আমাকে ফোনে বলেছিল তারা সেখানে বসবে। কিন্তু প্রাচারণার সমগ্রী রাখার বিষয়ে আমাকে কিছু বলা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি ছাত্রদলের ছেলেদের কল করেছিলাম। তারা ব্যস্ততা দেখান, পরে কল করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু পরে আর কল করেনি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বিশদ কিছু জানি না।”

সেখানে দায়িত্বরত এক কর্মচারী জানান, প্রার্থীতা ঘোষণার পর থেকেই ছাত্রদলের প্যানেলের লোকজন এ কক্ষ ব্যবহার করে আসছেন। তবে কারও আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া নির্দিষ্ট একটি ছাত্রসংগঠনকে ব্যবহার করতে দেওয়া হলে নির্বাচনী নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের প্যানেলের একাধিক প্রার্থীকে কল করা হলেও রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচনের চীফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলছেন, ‘এগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখাশোনার বিষয়। ক্যাফেটেরিয়ার বিষয়টি আমরা আপনার মাধ্যমে জেনেছি। আমরা আচরণবিধির বাইরে কিছু করতে পারি না।’