বেরোবির দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, ‘একজন’ বরখাস্ত


বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) যৌন হয়রানির অভিযোগে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে একই অভিযোগে অভিযুক্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. তানজিউল ইসলাম জীবনের বিরুদ্ধে এখনও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিচার বৈষম্যের অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উঠেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৪ জুলাই) রাতে শিক্ষার্থীরা জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা আন্দোলনে নামবেন।
শিক্ষার্থী সুমন, জুয়েল ও মেহেরা আফরোজের অভিযোগ, উপাচার্য বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন এবং অভিযুক্ত তানজিউল ইসলামকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, তবে আমরা তা কোনোদিনই হতে দেব না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিসংখ্যান বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৩শ সভার সিদ্ধান্তক্রমে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ৩ আগস্ট রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর রশিদের সই করা এক আদেশের মাধ্যমে তার বরখাস্তের বিষয়েটি জানানো হয়।
বেরোবি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথমে ওই শিক্ষককে ক্লাস ও পরীক্ষা থেকে এক বছরের জন্য বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়— এমন তথ্য জানাজানি হলে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে উপাচার্যের কাছে তার বহিষ্কার দাবি করেন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ কয়েকবার সময় নিয়েও ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ডাক দেন। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ওই শিক্ষককে বহিষ্কারের খবর জানানো হয়।
তবে প্রায় একই সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ড. তানজিউল ইসলামের বিরুদ্ধেও পরীক্ষায় নম্বর দেওয়া নিয়ে কারসাজি ও যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপও ছড়িয়ে পড়ে। তাই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তবে চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি শিক্ষক জীবনের বিরুদ্ধে তেমন কিছু খুঁজে পায়নি— এই মর্মে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু এত তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও তদন্ত কমিটির কোনো কিছু খুঁজে না পাওয়া সন্দেহজনক।
সূত্র বলছে, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষক জীবনকে তার অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে এবং আগামী যেকোনো সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত পাস করিয়ে নেওয়া হবে।
এ খবর জেনে ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকেই বলছেন, এই শিক্ষক বিএনপিপন্থি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ভিসির সঙ্গে সখ্যকে কাজে লাগিয়ে তিনি তদন্তকাজ প্রভাবিত করেছেন।
এ ছাড়াও প্রভাবশালী পরিচয়, প্রশাসনের ঘনিষ্ঠতা কিংবা গোপন সমঝোতার জেরে তানজিউল ইসলাম রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন বলেও দাবি অনেকের। শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় নিষ্পত্তিমূলক তদন্ত ও সমান বিচার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে ড. তানজিউল ইসলাম জীবনের বিপক্ষে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষক আমির বলেন, ‘আমরা তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন কবে এটি প্রকাশ করবে তা উপাচার্য জানেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো শওকত আলী বলেন, ‘আমরা একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। সিন্ডিকেট মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করেছি।’
একই অভিযোগ, একই তদন্ত কমিটি। তাহলে একটির ফল সাময়িক বহিষ্কার, অথচ অন্যজন এখনো বহাল— এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা সামনের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে এটা তুলব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব। এসব বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স।’