জাবিতে চালু হয়েছে ইলেকট্রনিক কার্ট, ভোগান্তি কমেনি শিক্ষার্থীদের

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:২১ পিএম
জাবিতে চালু হয়েছে ইলেকট্রনিক কার্ট, ভোগান্তি কমেনি শিক্ষার্থীদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থায় দুর্ভোগ কমাতে ক্যাম্পাসে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রনিক কার্ট গাড়ি চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা বহিরাগতরা সুবিধা পেলেও ভোগান্তি কমেনি শিক্ষার্থীদের।

‎শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ হওয়ার পর যখন নতুন করে ইলেকট্রনিক কার্ট গাড়ি চালুর সিদ্ধান্ত হয় তখন ভেবেছিলাম এবার হয়তোবা ভোগান্তি কিছুটা কমবে। কিন্তু এতে করে মোটেও দুর্ভোগ তো কমেনি, বরং আরও বেড়েছে। ছুটির দিনগুলোতে গাড়ি পাওয়া যায় না। বহিরাগত দিয়ে ক্যাম্পাস ভরে যায়। তাদের আনা নেওয়ায় বেশি ভূমিকা রাখে গাড়িগুলো। এতে করে বেশি ভাড়াও আদায় করা যায়। মূলত এটা চালু হওয়ায় বহিরাগতদের সুবিধা হলেও আমরা উপকৃত হচ্ছি না। সেজন্য এই কষ্ট লাঘবে আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।

‎সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্ট গাড়ি চালু হলেও এর সুফল পাচ্ছে না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সময়মতো গাড়ি না পেয়ে শিক্ষার্থীদের সকালে ক্লাস শুরুর আগে আবাসিক হলগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এছাড়া ছুটির দিনগুলোতে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে গেলে তাদের পরিবহনে বাড়তি সময় দেয় চালকরা। কার্ট গাড়িতে বহিরাগত ওঠানো নিষেধ থাকলেও অবাধে বহিরাগতদের গাড়িতে তুলছেন তারা। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। এছাড়া মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ আছে চালকদের মধ্যে।‎

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু সাইদ বলেন, 'আমরা সময়মতো এই গাড়ি কখনই পাইনা। প্রয়োজন ছাড়া অপ্রয়োজনে গাড়ির কি দরকার? ছুটির দিনগুলোতে গাড়িতে জায়গা পাওয়া যায় না। বহিরাগত দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে গাড়িগুলো। শুনেছি বাহিরে থেকে যারা ঘুরতে আসে তাদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়াও নাকি আদায় করা হয়। আসলে এভাবে তো চলতে পারে না।'

‎মিরপুর থেকে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, 'ঢাকায় থাকি চাকরির সুবাদে। আর ঢাকার ভিতরে ঘোরার মতো তেমন জায়গা নাই। তাই মাঝে মধ্যে ছুটির দিনগুলোতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসি বাচ্চাদের নিয়ে। সুন্দর সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস। কিন্তু ভিতরে চলাচলের জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা না থাকায় এই কার্ট গাড়িগুলোতে উঠি।'

‎ভাড়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মাঝেমধ্যে ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকাও নিয়ে থাকে চালকরা। কিন্তু আমরা শুনেছি এখানে সর্বোচ্চ ভাড়া দশ থেকে বিশ টাকা। কিন্তু উপায় না পেয়ে আমরা চল্লিশ টাকাও দেই।'

‎এদিকে অভিযোগের কথা অস্বীকার করে কার্ট গাড়ির এক চালক ময়নুল মিয়া বলেন, 'আমরা কারো কাছে থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেই না। তবে মাঝে মধ্যে বহিরাগত উঠাই।'

‎তিনি বলেন, 'ছুটির দিনগুলোতে মামারা (শিক্ষার্থীরা) অনেকেই বাড়িতে যায়। তখন ক্যাম্পাস ফাঁকা থাকে। আমরা যাত্রী পাই না। কিন্তু আমাদেরও তো পরিবার আছে, আমরা দিন আনি দিন খাই। তাই পেট বাঁচানোর দায়ে বাধ্য হয়েই বাহিরের লোকদের গাড়িতে উঠাই।'

‎ক্যাম্পাসে বর্তমানে বিভিন্ন রুটে নয়টি কার্ট গাড়ি চলাচল করছে। সংখ্যাটি পর্যাপ্ত না হলেও প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। কার্টের সংখ্যা বাড়ানো, রুটে মনিটরিংসহ নানা উদ্যোগ সামনে এসেছে।

‎বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, 'আমরা নির্দেশনা দিয়েছি শুধুমাত্র শুক্রবার শনিবারে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যদের ওঠানো যেতে পারে। কিন্তু বাকি দিনগুলোতে অন্যদের ওঠানোর সুযোগ নেই। গাড়িগুলো চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত। যে রুটে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার বাইরে কেউ যেতে পারবে না।'

‎কার্টের অপ্রতুলতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা 'মা পরিবহনকে' দায়িত্ব দিয়েছি। চায়না কোম্পানির আন্ডারে তারা কাজ করছে। তাদের সঙ্গে আরও দশটি গাড়ির বিষয়ে কথা হয়েছে। গাড়িগুলো প্রস্তুত হয়েছে। আমরা আশা করি আগামী মাসের মধ্যে বিশটির অধিক গাড়ি আমরা সার্ভিসে আনতে পারব। তখন, যাতায়াতে স্থিতিশীলতা ফিরবে আশা করি। এছাড়াও ক্যাম্পাসে একশতটি জোবাইক সার্ভিসে আনার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।'

‎উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আফসানা করিম রাঁচি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারান। এতে করে ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ হয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ নেমে আসে।

‎তাই এবছরের ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে  বিকল্প ও টেকসই সমাধান হিসেবে পরিবেশবান্ধব ‘কার্ট গাড়ি’ চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।‎