ইবি ছাত্রদলের নেতৃত্বে ‘সেশনজট’


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির বয়স চার বছর পূর্ণ হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি আজও। মাত্র তিন মাসের জন্য ঘোষিত কমিটি অছাত্র, বিবাহিত, নিষ্ক্রিয় ও চাকরিজীবী সদস্য দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বহাল থাকায় সংগঠনের ভেতরেও ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে আরিফুল ইসলাম জনি নামে এক ছাত্রদল কর্মী লিখেছেন, ‘৪ বছরে কেউ অনার্স শেষ করে, কেউ বিয়ে করে সংসার গুছায়। আর ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ৪ বছরেও আহ্বায়ক তকমা আঁকড়ে আছে। কমিটি গঠন মনে হয় এখনো কল্পনার স্তরে। সভা হয়, খসড়া চলে, সিদ্ধান্ত প্যাকেটে মুড়ে রাখা হয় ভবিষ্যতের জন্য। ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি আজ সেশনজটের প্রতীক। সবেমাত্র ৪ বছর। চলছে-চলুক, আমরা আছি।’
এছাড়া শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বয়স নিয়েও চলছে নানা সমালোচনা। বিভিন্ন মহলে ‘আদুভাই’ বা ‘চাচ্চু’ বলে সম্বোধনও করা হচ্ছে তাদের। এ নিয়ে ছাত্রদলে পদপ্রত্যাশী ও দীর্ঘদিন ধরে পদবঞ্চিতরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তারা জানান, অনেকদিন ধরে দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় শিক্ষার্থীরা পদ ধরে আছেন। অনেকে বিবাহিত ও চাকরিজীবী। এতে সংগঠনের দুর্দিনের ত্যাগী ও সক্রিয় কর্মীরা পরিচয়হীনতায় ভুগছেন।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১৬ জুন লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের সাহেদ আহম্মেদকে আহ্বায়ক ও ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রুমী মিথুনকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ঘোষণার সময় কমিটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল তিন মাস।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘমেয়াদি এই আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্যই দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। অনেকে বিবাহিত ও চাকরিজীবী। কেউ কেউ বিদেশেও অবস্থান করছেন। এতে পদবঞ্চিত এবং নতুন কর্মীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।
শাখা ছাত্রদলের সদস্য নুর উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের আগে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমরা ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়েছি। আগস্ট পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েক হাজার কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভবিষ্যতের কমিটিতে কেবল চলমান শিক্ষার্থীরাই স্থান পাবে। ২০০৮-০৯, ২০১০-১১ ইত্যাদি সেশন থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে মাস্টার্স বা সান্ধ্যকালীনে ভর্তি হয়ে সুযোগ পাবে না। আমরা আশাবাদী, কেন্দ্র আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে এবং শিগগিরই রানিং শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন কমিটি দেবে।
শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ বলেন, কমিটি ঘোষণার পরদিনই আমি তা প্রত্যাখ্যান করি। অধিকাংশ সদস্যই অচেনা, নিষ্ক্রিয় ও অছাত্র। অনেকে বিবাহিতও। এসব কারণে নিয়মিত নেতাকর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। আমি বিশ্বাস করি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও তারেক রহমান বিষয়টি জানেন এবং ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি দেবেন।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, কেন্দ্র অবশ্যই নতুন কমিটি দেবে। দীর্ঘদিন স্বৈরাচারের দুঃশাসন থাকার কারণে কমিটি দেওয়া হয়নি। শিগগিরিই যারা নিয়মিত ছাত্র তারাই নতুন কমিটিতে আসবে ইনশাআল্লাহ। বিষয়টি আমাদের হাতে নেই, সম্পূর্ণ বিষয়টি কেন্দ্রের হাতে।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, রাজনৈতিক কিছু বিষয়ের জন্য, বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের গুপ্ত অপরাজনীতি চেপে বসার কারণে ক্যাম্পাসে অভিজ্ঞদের প্রয়োজন ছিল। তাই আমরা এতদিন আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। যারা দীর্ঘদিন ধরে ইবি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ত্যাগী তাদেরকে আমরা কমিটির আওতায় এনে শিগগিরই কমিটি দেবো।