মুসলিম সভ্যতার নিদর্শন আমির উল্লাহ মুন্সী জামে মসজিদ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৩ মার্চ ২০২৫, ০২:১১ পিএম
মুসলিম সভ্যতার নিদর্শন আমির উল্লাহ মুন্সী জামে মসজিদ

জেলার দশমিনার মুঘল সাম্রাজ্যের শাসন আমলে এক গম্বুজ ও চারমিনার বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন আমির উল্লাহ্ মুন্সী জামে মসজিদ শত শত বছর ধরে টিকে আছে।  যা দেখে কৌতুহলী মানুষের বিস্ময়ের শেষ নেই। ৫০১ বছর পুর্বে ১৫২৬ সালে মোঘল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি প্রাচীন এ মসজিদটি আজও দাঁড়িয়ে থাকার পেছনে রয়েছে গ্রামের প্রিয় ধর্মপ্রাণ কিছু মানুষের ভক্তি , ভালোবাসা ও সহায়তায়। তাদের ঐকান্তিক চেষ্টায় উপজেলার মুসলিম সভ্যতার একমাত্র দুর্লভ এ প্রাচীন নিদর্শনটি টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হয়ে।

প্রাচীন এ মসজিদটি অবস্থান পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আদমপুর গ্রামে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ১২টি পিলার বিশিষ্ট প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতায় মসজিদটির উপড়ের দিকে সমান মাঝ বরাবর রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি গম্বুজ ও চার কোনে চারটি মাজারি আকারের মিনার। চার দেয়ালের ভিতরের দিকে উত্তর পশ্চিম সোয়া ১৫ ফুট প্রস্থের মেঝেতে তিন কাতারে প্রতিটিতে দশজন করে মোট ত্রিশজন মুসুল্লি ও একজন ইমাম একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। এদিকে মসজিদটির প্রতিটি দেয়ালে প্রায় ৫ ফুট চওড়া হওয়ায় বাহিরের পাশ দিয়ে এটি উত্তর দক্ষিণে সাড়ে ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও পূর্ব পশ্চিমে সোয়া ২৫ ফুট প্রস্থ রয়েছে।

ইতিহাস ও তথ্য যাচাই করে জানা যায়, অতীতের এ মসজিদ সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল প্রতিষ্ঠাতা মুন্সী আমির উল্লাহর বসতবাড়ি ও উত্তর পাশে ছিল তার ব্যবহারের জন্য বিশাল বড় দীঘি। কালের আবর্তে এসব চরাঞ্চল উঁচু হয়ে চাষাবাদের জমি ও ঘনবসতি রুপান্তরিত হয়ে উঠেছে। তাই ৫০১ বছরের পূর্বের সেই বাস্তবতা এখন পরিবর্তন হয়েছে। আর বেড়েছে জনসংখ্যা।

এ কারনে ইমামসহ একত্রিশ জন মুসুল্লি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মসজিদটি পূর্ব পাশে ফাঁকা জায়গায় খুঁটি স্থাপনা করে তার ওপরে টিনের চালা দিয়ে আরও অতিরিক্ত ১৫০জনের জামাতে নামাজ আদায়ের জায়গা তৈরি করেছেন স্থানীয়রা। এতে অযত্ন আর অবহেলায় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে মসজিদটি। ঐতিহ্য রক্ষা করতে মসজিদ সংরক্ষণের দাবি স্থানীয়দের।

একাধিক স্থানীয়রা জানান, চুন, সুরকি ও পোড়া টিনের তৈরি প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ মসজিদটি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীরা। তাই এটি সংরক্ষণে সরকারি উদ্যোগ চান স্থানীয়রা।

দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দাস পাড়া গ্রামের সামছুল হক রাড়ি ও শাহ আলম হাওলাদার বলেন, দেখতে আসছি এ পুরাকীর্তি নিদর্শন। আমরা শুনছি এটি ৫০০ বছরের আগের মুঘল আমলের।  এটি যত্ন করা প্রয়োজন।

মুন্সি আমির উল্লাহর ষষ্ঠ বংশধর মসজিদটির বর্তমান মোয়াজ্জীন শাহ আলম মুন্সি বলেন, প্রায় ৪৬বছর আগে ৯৩বছর বয়সে আমার বাবা নুরু মুন্সি মারা যান। আমার বাবা ও তার পূর্ব পুরুষ থেকে শোনা ১৫১০/১৫১২ সালের দিকে বর্তমান বাউফল উপজেলার কালিশুরি এলাকা থেকে এসে এখানে বাড়ি করেন মুন্সি আমির উল্লাহ। তখন এ গ্রামে গুটিকয়েক পরিবার বসবাস করতেন।

স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, এখানে মসজিদের দরকার হলে ১৫২৬ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়। এটি বর্তমান অবস্থা শোচনীয়। অর্থিক সংকটের মধ্যেও নিজেরা যেভাবে পারি এটি রক্ষণাবেক্ষণ করি। মুসুল্লিদের আর্থিক সহায়তায় মেরামত করি। মসজিদটি রক্ষায় সরকারি কোনো অনুদান পাইনি। সরকারের কাছে অনেকবার অবেদন করা হয়েছে কোনো সাহায্য সহায়তার মুখ দেখিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসকে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বরাদ্দ পেলে মুঘল সাম্রাজ্যের ৫০০ বছরের পুরনো দশমিনার এ মসজিদটির সংস্কারে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করা হবে।