দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে হুয়াওয়ের তিন নতুন উদ্যোগ
বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল অর্থনীতি–সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও সরকারের আইসিটি বিভাগের সঙ্গে তিনটি নতুন উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছে চীনা টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানে হুয়াওয়ের নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই তিন উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হুয়াওয়ে বাংলাদেশ এসব তথ্য জানিয়েছে।
‘বাংলাদেশে, বাংলাদেশের জন্য’ স্লোগান নিয়ে নতুন উদ্যোগগুলো এনেছে হুয়াওয়ে। উদ্যোগগুলোতে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হুয়াওয়ের উদ্যোগগুলো হলো প্রয়োজনীয় আসবাব ও সরঞ্জামাদি প্রদান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধিমান শ্রেণিকক্ষ (ইন্টেলিজেন্ট ক্লাসরুম) চালু, আইসিটি ডিভিশনের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্ভাবনী (ইনোভেশন) ল্যাব স্থাপন ও দেশের অর্থনৈতিক খাতের পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ, গবেষণাকর্মী ও শিক্ষকদের জন্য ‘চীন-বাংলাদেশ ফিনটেক বিনিময় কর্মসূচি’র সূচনা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমি মনে করি, চীন ও বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং তা আরও উন্নত হচ্ছে। ঢাকায় হুয়াওয়ের দক্ষিণ এশিয়ার সদর দপ্তর দেখে আমি আনন্দিত হয়েছি।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বিশ্বের শীর্ষ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) অবকাঠামো প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে হুয়াওয়ে বাংলাদেশে ২৬ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে। হুয়াওয়ে বাংলাদেশের আইসিটি খাতকে টু–জি থেকে শুরু করে ফাইভ–জিতে উন্নীত করতে নেতৃত্ব দিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী বলেন, হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রায় বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে সংযোগ সম্প্রসারণে হুয়াওয়ের অবদান প্রশংসনীয়। এই আয়োজনে আরও বক্তৃতা করেন আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিউদ্দিন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন হুয়াওয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যান জুনফেং।
অনুষ্ঠানের বিশেষ একটি অংশ ছিল ‘বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি রিসার্চ রিপোর্ট’ প্রকাশ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও চায়না একাডেমি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজি (সিএআইসিটি) যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি উন্মোচন করেন মো. এমদাদ উল বারী। সিএআইসিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ঝিকিন ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ডের উন্নয়ন নিয়ে এই বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, ইকোসিস্টেম, ব্যবসার পরিবেশ ও সুনির্দিষ্টভাবে দেশের পরিস্থিতি এতে উঠে এসেছে।
ঘোষিত তিনটি উদ্যোগের প্রথমটির আওতায় হুয়াওয়ে ইন্টেলিজেন্ট ক্লাসরুম স্থাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, যেমন আইডিয়া হাব, আধুনিক অ্যাকসেস পয়েন্ট ও ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ প্রদান করবে। দ্বিতীয় উদ্যোগে হিসেবে হুয়াওয়ে ও আইসিটি বিভাগ যৌথভাবে বাংলাদেশে একটি ইনোভেশন ল্যাব প্রতিষ্ঠা করবে। এই ল্যাবে বাংলাদেশে দক্ষ আইসিটি পেশাজীবী গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দেবে হুয়াওয়ে। বাংলাদেশে আইসিটি উদ্ভাবনের সক্ষমতা বাড়াতে ও আইসিটি কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য এই গবেষণাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
তৃতীয় উদ্যোগে বাংলাদেশের অর্থনীতি খাতকে আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর ও সমৃদ্ধ করতে হুয়াওয়ে ‘চীন-বাংলাদেশ ফিনটেক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’ চালু করবে। এই উদ্যোগে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা চীনে ফিনটেক বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো ফিনটেক ও মাইক্রোফাইন্যান্স প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈষম্য কমিয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করা।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, হুয়াওয়ে বাংলাদেশে শুধু প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা প্রদান করছে না, বরং বাংলাদেশ যাতে প্রযুক্তি, শিক্ষা ও অর্থনেতিক খাতে প্রকৃতভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সে জন্য কাজ করছে। এর কিছু উদাহরণ হলো তরুণদের জন্য হুয়াওয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, ল্যাব ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। হুয়াওয়ে সিডস ফর দ্য ফিউচার, আইসিটি কম্পিটিশন, বুয়েটে জিএসএম ল্যাব, আইসিটি একাডেমি, ইউ আই ইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক সোলার ল্যাব স্থাপন, আইসিটি ইনকিউবেটর আয়োজন এবং এই নতুন তিনটি উদ্যোগ।