যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় শীর্ষে ইউটিউব

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩২ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় শীর্ষে ইউটিউব

এক দশক আগেও ইউটিউব মানে ছিল অপেশাদার তরুণদের তৈরি নিম্ন বাজেটের অপেশাদার ভিডিও। তবে ২০ বছরে পা দিয়ে ইউটিউব হয়ে উঠেছে আমেরিকানদের জন্য টেলিভিশন দেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৭০ কোটির বেশি।

ইতিমধ্যে ডিজনির মতো শতবর্ষী বিনোদন জায়ান্টকে পেছনে ফেলেছে ইউটিউব। আন্তর্জাতিক গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান নিলসেন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইউটিউবের ভিউয়ারশিপ ছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যেখানে ডিজনির ছিল মাত্র ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।

বিশ্লেষক সংস্থা মফেটনাথানসনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ইউটিউবের আয় ডিজনিকে ছাড়িয়ে যাবে, যেখানে ডিজনির ২০২৪ সালের মিডিয়া আয় ছিল প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার। যদিও আলফাবেট (গুগলের মূল কোম্পানি) ইউটিউবের নির্দিষ্ট রাজস্ব নিয়মিত প্রকাশ করে না, তবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সেপ্টেম্বর চার প্রান্তিকে ইউটিউব বিজ্ঞাপন ও সাবস্ক্রিপশন মিলিয়ে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে।

এআইভিত্তিক ভবিষ্যতের ঘোষণা

গত মঙ্গলবার ইউটিউবের বার্ষিক ‘মেড অন ইউটিউব’ পণ্য উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দেয়, পরবর্তী দশকে কনটেন্ট তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই হবে তাদের মূল শক্তি।

ইউটিউবের সিইও নীল মোহন বলেন, ‘এসব কেবল একটি টুল, এর বেশি কিছু নয়। কোনো স্টুডিও, নেটওয়ার্ক, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বা এআই টুল ভবিষ্যতের বিনোদনকে এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ইউটিউব এখন একটি সম্মানজনক ও টেকসই ক্যারিয়ার পথ, যেখানে কনটেন্ট নির্মাতারা প্রচলিত মিডিয়া হাউসের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই কাজ করতে পারেন এবং এবার তাঁদের সহায় হবে অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তি।

কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য ৩০টিরও বেশি নতুন ফিচার

এবারের অনুষ্ঠানে ইউটিউব ৩০টিরও বেশি নতুন ফিচার উন্মোচন করেছে, যার অধিকাংশেই এআই ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

  • ভিডিওতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাসঙ্গিক কেনাকাটার লিংক যুক্ত করা।
  • একাধিক ক্লিপকে একত্রে করে তাৎক্ষণিকভাবে একটি ফার্স্ট কাট তৈরি করা।
  • অডিও পডকাস্টের জন্য এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও।
  • বক্তৃতা থেকে গান তৈরি করার জেনারেটর।

ইউটিউবের ক্রিয়েটর পণ্য বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমজাদ হানিফ জানান, ইউটিউবের নিজস্ব কর্মীরাও এখন এআই ব্যবহার করে দ্রুত আইডিয়া তৈরি করছেন। এ কারণে পণ্যের উন্নয়নের গতি আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে।

তারকাদের অংশগ্রহণ ও ইউটিউবের প্রভাব

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ পপ তারকা দুআ লিপা, মার্ক রোবার, স্মোশ ও ব্র্যান্ডন বি-এর মতো ইউটিউব তারকারা, যাঁদের প্রত্যেকের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১ কোটি ৬০ হাজার বা তার বেশি। অনেকের মতে, এই সব ইউটিউব তারকাই আজকের প্রজন্মের কাছে লেট নাইট টিভি হোস্টদের জায়গা দখল করে নিয়েছেন।

দুয়া লিপা বলেন, ইউটিউব তাঁকে ভক্তদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করেছে। তবে এআই ব্যবহার নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তাঁর মুখপাত্র তৎক্ষণাৎ কোনো মন্তব্য জানাননি।

ইউটিউব জানায়, গত চার বছরে কনটেন্ট নির্মাতাদের তারা ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ প্রদান করেছে। এই অর্থ দিয়ে অনেক কনটেন্ট নির্মাতা নিজস্ব স্টুডিও তৈরি করছেন হলিউডের আদলে।

২০ বছর পর ইউটিউব আর কেবল একটি ভিডিও সাইট নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি বৈশ্বিক বিনোদনশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। গুগলের প্রযুক্তিগত সমর্থন এবং এআইয়ের শক্তিতে ভর করে ইউটিউব এখন ভবিষ্যতের মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপ গড়ে তোলার পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স