স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত ঘুরছে পৃথিবী, ছোট হচ্ছে দিন!


পৃথিবীর ‘সর্বকালের সবচেয়ে ছোট’ দিন হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে ২০২৫ সালের ৯ জুলাই (বুধবার)। একই রকম ছোট দিন হতে পারে চলতি বছরের ২২ জুলাই এবং ৫ আগস্ট—এমনটাই দাবি বিজ্ঞানীদের। তারা বলছেন, এই ঘটনার জন্য চাঁদের বর্তমান অবস্থান দায়ী, যা পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিকে প্রভাবিত করছে। পৃথিবীর কিছুটা দ্রুত ঘূর্ণনের কারণও এটি, যার ফলে দিনগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য ছোট হয়ে আসছে।
লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, চাঁদের অবস্থানের কারণে এই প্রতিটি দিনের দৈর্ঘ্য স্বাভাবিক দিনের তুলনায় ১.৩ থেকে ১.৫১ মিলিসেকেন্ড কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেমস সার্ভিস (আইইআরএস) থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ জুলাই এবং ৫ আগস্ট তুলনামূলকভাবে ছোট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন মতে, বিশ্বব্যাপী সময় নির্ধারণের তত্ত্বাবধানকারী আইইআরএস-কে সংক্ষিপ্ত দিনের সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য একটি ‘নেগেটিভ লিপ সেকেন্ড’ প্রবর্তন করতে হবে – যা হবে প্রথমবারের মতো এ ধরনের সংশোধন বাস্তবায়নের ঘটনা।
সান দিয়েগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অব ওশানোগ্রাফির ভূ-পদার্থবিদ ডানকান অ্যাগনিউকে উদ্ধৃত করে এনওয়াই পোস্ট জানিয়েছে, ‘এটি বিরল পরিস্থিতি এবং একটি বড় ব্যাপার।’
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির ক্ষেত্রে এটি কোনো বিশাল পরিবর্তন নয় যা কোনো বিপর্যয় বা অন্য কিছুর দিকে নিয়ে যাবে। তবে এটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির ব্যাখ্যা
পৃথিবীতে একদিন বলতে গ্রহটির তার অক্ষে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে বোঝায় - যা প্রায় ৮৬,৪০০ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা।
তবে এই ঘূর্ণন ধ্রুবক নয় এবং এটি সূর্য ও চাঁদের অবস্থান, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন এবং গ্রহের ভরের বণ্টনসহ বিভিন্ন কারণে প্রভাবিত হতে পারে।
ঐতিহাসিকভাবে, পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমছে, যার ফলে সময়ের সাথে সাথে দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ১ থেকে ২ বিলিয়ন বছর আগে একটি দিন মাত্র ১৯ ঘণ্টা স্থায়ী হতো। এর কারণ সম্ভবত চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি ছিল, যার ফলে মহাকর্ষীয় টান বেশি ছিল এবং গ্রহটি দ্রুত ঘূর্ণায়মান ছিল।
কিন্তু চাঁদ ধীরে ধীরে দূরে সরে যাওয়ার সাথে সাথে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমে গেছে, যার ফলে গড়ে দিন দীর্ঘ হচ্ছে। তবুও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গবেষকরা এই প্রবণতায় অনিয়ম লক্ষ্য করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে ১৯৭০-এর দশকে সুনির্দিষ্ট পরিমাপ শুরু হওয়ার পর থেকে পৃথিবী যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত গতিতে ঘুরছে।
timeanddate.com -এর তথ্যানুসারে, পৃথিবীর ঘূর্ণনকাল সবচেয়ে দ্রুত ছিল ২০২৪ সালের ৫ জুলাই, যখন পৃথিবী স্বাভাবিক ২৪ ঘণ্টার চেয়ে ১.৬৬ মিলিসেকেন্ড দ্রুত গতিতে তার ঘূর্ণন সম্পন্ন করে।
৯ জুলাই, ২২ জুলাই এবং ৫ আগস্ট কী পরিবর্তন হচ্ছে?
২০২৫ সালের ৯ জুলাই, ২২ জুলাই এবং ৫ আগস্ট চাঁদ পৃথিবীর বিষুবরেখা থেকে তার সবচেয়ে দূরবর্তী অবস্থানে পৌঁছাবে, যার ফলে এর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ গ্রহের অক্ষের ওপর প্রভাব ফেলবে।
চাঁদ যখন বিষুবরেখার কাছে ঘোরার করার পরিবর্তে পৃথিবীর মেরুর কাছাকাছি চলে আসে, তখন এর মহাকর্ষীয় প্রভাব পরিবর্তিত হয়। এই অবস্থানের ফলে পৃথিবী একটু দ্রুত ঘূর্ণায়মান হয়, যা দিনের দৈর্ঘ্যকে ছোট করে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস