আবারও সমতায় শেষ মাদ্রিদ ডার্বি, বার্সেলোনার হাসি

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
আবারও সমতায় শেষ মাদ্রিদ ডার্বি, বার্সেলোনার হাসি

মাদ্রিদ ডার্বি; জিতলে শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে পয়েন্ট ব্যবধান অনেকটা বাড়িয়ে নেবে রিয়াল মাদ্রিদ, আর তাদের হারিয়ে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা আতলেতিকো মাদ্রিদ ব্যবধান কমিয়ে শিরোপাস্বপ্ন আরও জোরালো করবে। অপরদিকে, এই দুই দল যেন ড্র করে, এই আশায় চাতকপ্রাণ হয়ে ছিল শিরোপার অপর দাবিদার বার্সেলোনা। আশার এই ত্রিকোণ পিরামিড বেয়ে অবশেষে বিজয়ের হাসিটা হেসেছে বার্সেলোনা।

হ্যাঁ, লা লিগায় মৌসুমের প্রথম মাদ্রিদ ডার্বির মতো দ্বিতীয় ডার্বিও শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়।

এতে করে এক পয়েন্ট পেয়ে ৫০ পয়েন্টে টেবিলের চূড়ায়ই রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, আর ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানেই আতলেতিকো। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বেশ কয়েক ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়ে শিরোপার দৌড়ে যতটা পেছনে পড়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা, ২৩তম রাউন্ডে নিজেদের ম্যাচটি জিতে ব্যবধান কমিয়ে রিয়ালের সঙ্গে ২ ও আতলেতিকোর সঙ্গে ১-এ আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে তাদের।

এদিন পেনাল্টি থেকে ম্যাচের প্রথমার্ধে আতলেতিকোকে এগিয়ে নেন হুলিয়ান আলভারেস, পরে দ্বিতীয়ার্ধে গোল করে রিয়ালকে সমতায় ফেরান কিলিয়ান এমবাপ্পে।

ম্যাচের আগে দুদিন আগে ফুটবলকে বিদায় জানানো রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক ব্রাজিলীয় ফুটবলার মার্সেলোকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়। মাঠে উপস্থিত থেকে বের্নাবেউয়ের সমর্থকদের ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি। এরপর শুরু হয় খেলা।

ম্যাচের শুরুতেই লস ব্লাঙ্কোসদের ওপর চাপ তৈরি করে দিয়েগো সিমিওনের শিষ্যরা। প্রথম পাঁচ মিনিটে বল তেমনভাবে স্পর্শই করতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা।

ষষ্ঠ মিনিট থেকে নিজেদের স্বভাবজাত খেলায় ফিরতে শুরু করে রিয়াল। তবে মাঝেমধ্যে বল পেলেই পাল্টা আক্রমণে উঠতে থাকেন হুলিয়ান-গ্রিজমানরা।

এর ধারাবাহিকতায় ম্যাচের চতুর্দশ মিনিটে গোলে প্রথম শট নেন আতলেতিকোর সামুয়েল লিনো, তবে তার সেই শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে বেরিয়ে যায়। এরপর ২১তম মিনিটে গোল করার ভালো সম্ভাবনা জাগান ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগোরা। প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে রিয়ালের অন্তত চারজন খেলোয়াড় ঢুকে পড়েন গোলের সন্ধানে, তবে শেষ মুহূর্তে কোনোমতে তাদের আক্রমণটি প্রতিহত করেন আতলেতিকোর ডিফেন্ডাররা।

তবে ৩১তম মিনিটে সবাইকে অবাক করে দিয়ে লস রোহিব্লাঙ্কোসদের পেনাল্টি দিয়ে বসেন রেফারি।

বল নিয়ে রিয়ালের বক্সের মধ্যে ঢোকার পরপরই লিনোকে প্রতিহত করতে গিয়ে তার পায়ে পাড়া দিয়ে বসেন রিয়ালের ডিফেন্স সামলানো ফরাসি মিডফিল্ডার অরেলিয়েঁ চুয়ামেনি। এতে লিনো পড়ে গিয়ে কাতরাতে থাকলেও শুরুতে ফাউল ধরেননি রেফারি, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে ভিএআর টিম থেকে বার্তা এলে খেলা থামিয়ে টাচলাইন মনিটরে রিভিউ দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি সেজার সোতো গ্রাদো।

রিভিউতে লিনোর পায়ে অতি সামান্য স্পর্শ করতে দেখা যায়, সেটি ফাউল না ধরলেও কারও কিছু বলার ছিল না, তবে রেফারি শেষ পর্যন্ত আইনের প্রতিই শ্রদ্ধা দেখান। এই সিদ্ধান্তে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসেন রিয়াল বস আনচেলত্তি, ধারাভাষ্যকারদের মতো অবাক হয়ে যান দর্শকদের অনেকেই, কিন্তু পেনাল্টি স্পটে বল বসান হুলিয়ান আলভারেস, আর দুর্দান্ত এক পানেনকা শটে দলকে এগিয়ে নেন এই আর্জেন্টাইন।

লা লিগায় চলতি মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এটিই প্রথম পেনাল্টি দেওয়ার ঘটনা। এছাড়া ২০০৮/০৯ মৌসুম থেকে রিয়ালের বিপক্ষে (চারটি) পেনাল্টি থেকে মাত্র তৃতীয় গোল পেল আতলেতিকো, বের্নাবেউতে যা মাত্র দ্বিতীয় গোল। ২০১০ সালের মার্চে সবশেষ এই মাঠে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন আতলেতিকোর তৎকালীন উরুগুয়ে ফরোয়ার্ড দিয়েগো ফোরলান।

পরে সমতায় ফেরার চেষ্টা করেও আতলেতিকোর লো-ব্লক ডিফেন্স ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে এক গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় রিয়াল মাদ্রিদ।

প্রথমার্ধে ৬১ শতাংশ সময় বল নিজেদের দখলে রেখে সাতটি শট নিয়ে তার একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি রিয়াল। অপরদিকে, পাঁচটি শটের মধ্যে পেনাল্টির ওই শটটিই কেবল লক্ষ্যে ছিল আতলেতিকোর, যা থেকে আসে গোল।

এছাড়া লা লিগায় মাদ্রিদ ডার্বির ইতিহাসে প্রথমার্ধে দুই দল মিলিয়ে মাত্র একটি শট লক্ষ্যে থাকার ঘটনাও বেশ বিরল। এমন ঘটনা দেখা গিয়েছিল ২০১৭ সালে। তার আগে সেই ২০০৩/০৪ মৌসুমে।

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে কিছুক্ষণের মধ্যেই সমতায় ফেরে রিয়াল মাদ্রিদ। ৫০তম মিনিটে ডান পাশ দিয়ে আতলেতিকোর বক্সে ঢুকে ৬ গজ বক্সের মাঝামাঝি গোলমুখে থাকা বেলিংহ্যামকে পাস দেন রদ্রিগো, প্রথম ছোঁয়াতেই তা জালে জড়ানোর চেষ্টা করলে বেলিংহ্যামের সেই শট ফিরিয়ে দেন আতলেতিকো গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক, তবে ফিরতি বল বক্সের মধ্যে ফাঁকায় দাড়িয়ে থাকা এমবাপ্পের কাছে গেলে জোরালো শটে ঠিকানা খুঁজে নেন এই ফরাসি তারকা।

এ নিয়ে চলতি মৌসুমে লা লিগায় ২১ ম্যাচে এমবাপ্পের গোলসংখ্যা বেড়ে হলো ১৬টি, আর দুটি অ্যাসিস্টসহ মোট ১৮টি গোলে অবদান রাখলেন তিনি। পিচিচি ট্রফির দৌড়ে তার চেয়ে এগিয়ে আছেন কেবলমাত্র বার্সেলোনা স্ট্রাইকার রবের্ট লেভানডোভস্কি (১৮)।

সমতায় ফিরে যেন ছন্দ খুঁজে পায় রিয়াল। ৫৭তম মিনিটে দানি সেবায়োসের আরও একটি ক্রস থেকে বেলিংহ্যামের দুর্দান্ত হেডার ঠেকিয়ে দেন ওবলাক। পরের মিনিটে আরও একটি প্রচেষ্টা চালান এমবাপ্পে।

ম্যাচের এক ঘণ্টা গড়াতেই আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে রিয়াল মাদ্রিদ, এ সময় থেকে পুনরায় এগিয়ে যেতে চেষ্টা শুরু করে আতলেতিকো মাদ্রিদও। তবে রিয়ালের ক্রমাগত আক্রমণের হলকা সামলে তা করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছিল তাদের জন্য।

এর ধারাবাহিকতায় ৭৪তম মিনিটে দুর্দান্ত একটি আক্রমণ ঠেকিয়ে স্বাগতিকদের নিশ্চিত গোলের সুযোগবঞ্চিত করেন ওবলাক। ৮২তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া রদ্রিগোর শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।

নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট বাকি থাকতে আরও একবার আতলেতিকোর রক্ষণে ভীতি ছড়ান এমবাপ্পে, তবে এবারও আতলেতিকোর কাণ্ডারি হয়ে সেই প্রচেষ্টা রুখে দেন ওবলাক। অতিরিক্ত যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে একটি সুযোগ তৈরি করেন আনহেল কোরেয়াও, সেটিও অবশ্য ঠেকিয়ে দেন কোর্তোয়া।

এরপর আর সময় না থাকলে শেষের বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি, আর জয়ের হাসি হাসে বার্সেলোনা।

লা লিগায় এ নিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ আতলেতিকোর বিপক্ষে জয়বঞ্চিত রইল রিয়াল। গত মৌসুমে লিগে একটিমাত্র ম্যাচ হারে তারা, সেটা আতলেতিকোর বিপক্ষেই। গত সেপ্টেম্বরে চলতি মৌসুমে লিগে প্রথম ম্যাচটিও ১-১ গোলে ড্র হয়।

আজকের ড্রয়ে ২৩ ম্যাচে ১৫ জয় ও ৫ ড্রয়ে টেবিলের শীর্ষে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট হলো ৫০। সমান ম্যাচে ১৪ জয় ও ৭ ড্রয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আতলেতিকোর পয়েন্ট ৪৯। আর এক ম্যাচ কম খেলা বার্সেলোনা ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।

আগামীকাল রাতে সেভিয়ার রামোন সানচেজ পিসুয়ান স্টেডিয়ামে খেলতে নামবে হান্সি ফ্লিকের বার্সেলোনা। প্রতিযোগিতায় ফিরতে ম্যাচটিতে জয়ের বিকল্প নেই তাদের।