কোরআন অবমাননাকারী অপূর্ব পালকে নিয়ে যা বললেন আহমাদুল্লাহ ও আজহারী


বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পালের কোরআন অবমাননার ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও মিজানুর রহমান আজহারী।
রবিবার (৫ অক্টোবর) নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ সম্পর্কিত আলাদা স্ট্যাটাস দেন দুজন।
শায়খ আহমাদুল্লাহ লেখেন, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে, তা পূর্বের সকল অপকর্মকে ছাড়িয়ে গেছে। নির্ভার চিত্তে ঠোঁটে শিস বাজাতে বাজাতে কোরআন পদপিষ্ট করার ভিডিওটি যারাই দেখেছেন, সবারই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।
তিনি আরও লেখেন, কেউ কেউ অপূর্ব পালকে মানসিক রোগী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। পূর্বেও অনেক ইসলাম অবমাননাকারীকে মানসিক রোগী বলে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কথা হলো, একজন মানসিক রোগী কীভাবে দেশের নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে! তাছাড়া মানসিক রোগীরা কেন বারবার ইসলাম ধর্মের ওপরই আক্রমণ করে!
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লেখেন, মনে রাখতে হবে, ক্লাসে হাদিসের উদাহরণ আনায় উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে ইতঃপূর্বে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ কোরআন অবমাননার ঘটনা ভাইরাল হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা অপূর্ব পালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়-প্রশাসনও এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। এমন কুলাঙ্গার ছাত্রকে প্রশ্রয় দেয়ার অপরাধে তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে। এদেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামবিরোধী অ্যাজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশে এটা কোনোভাবেই হতে দেয়া যায় না।
শেষে তিনি লেখেন, অপূর্ব পাল যা করেছে, এটা ধর্মীয় দাঙ্গা বাধানোর সুস্পষ্ট উসকানি। আমরা অবিলম্বে তার দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। পাশাপাশি সরকারের প্রতি আমাদের দাবি--অবিলম্বে ধর্ম অবমাননা বিষয়ে কঠোর ও সুস্পষ্ট আইন তৈরি করে এর বাস্তব প্রয়োগ ঘটাতে হবে। নতুবা দেশের শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা নষ্টকারী ন্যক্কারজনক এই ঘটনা বারবার ঘটতেই থাকবে।
ড. মিজানুর রহমান আজহারী লেখেন, সাম্প্রতিক সময়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র কোরআন অবমাননার যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এ ঘটনা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ইতঃপূর্বে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে, হাদিসের উদাহরণ দেয়ার কারণে শিক্ষকের বহিষ্কার দেখেছে গোটা দেশ! এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা প্রবাহ নয় বরং কাঠামোগত ইসলাম বিদ্বেষের উদাহরণ।
তিনি আরও লেখেন, কেউ মানসিক ভারসাম্যহীন হলে, মানসিক হাসপাতালে যাবে। অথবা যাবে রিহ্যাব সেন্টারে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন? দেশের এই ক্রান্তিকালে কেউ সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা লাগাতে চাচ্ছে কি না-- সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। এটা দেশকে অশান্ত করার একটি নীলনকশার অংশও হতে পারে।
আজহারী লেখেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুসলিম শিক্ষার্থীদেরও উচিত এর কঠোর প্রতিবাদ জানানো। কোরআন এসেছে গোটা মানবজাতির হেদায়েত হিসেবে। কোনো ধর্মগ্রন্থের অবমাননাই আমরা বরদাস্ত করব না।
তিনি আরও লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত পবিত্র কোরআন অবমাননাকারী এই নরাধমকে অনতিবিলম্বে বহিষ্কার করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এই কুলাঙ্গারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই; যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন দুঃসাহস দেখানোর স্পর্ধা না দেখায়।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব কর্মসূচি নেয়া যায় উল্লেখ করে লেখেন, প্রতিবাদ কর্মসূচি ছাড়াও, আগামী এক মাস নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত কর্মসূচি, কোরআন স্টাডি সার্কেল, কোরআনের অনুবাদ ও তাফসির বিতরণ কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে। আমাদের প্রতিবাদ কেবল ঘৃণায় নয়, দায়িত্বশীলতায় হোক। ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা ইসলামের সুমহান আদর্শকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেব-- ইনশাআল্লাহ।
শেষে তিনি লেখেন, তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতিকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফয়সালা হলো— তিনি তার জ্যোতিকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন। অবিশ্বাসীদের কাছে তা যতই অসহনীয় হোক না কেন। (সূরা আস সফ: ৮)
উল্লেখ্য, পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় গ্রেফতার শিক্ষার্থী অপূর্ব পালকে রোববার (৫ অক্টোবর) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপূর্ব পালকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।