পুরো সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ
পুরো সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ বুধবার রংপুর পর্যটন হোটেলে এনসিপির আট জেলা ও এক মহানগর আহ্বায়ক কমিটির পদপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন যথার্থ সুপারিশ দিয়েছে। সংস্কারের বিপক্ষে আমরা ঐকমত্য কমিশনে অনেক দলকে অবস্থান নিতে দেখেছি। বিএনপিও অনেকগুলো বড় সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে গোটা সংস্কারপ্রক্রিয়াকে তারা চায় কি না, এইটা নিয়ে কিন্তু এখন প্রশ্ন তৈরি হবে। কারণ, পুরো সময় ধরে দেখেছি আমরা, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি ভেটো দিয়েছে, বিরোধিতা করেছে।’
নাহিদ আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে তো নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। জুলাই সনদ ও বিচারের রোডম্যাপ দিয়ে তারপরে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। এ কারণে দ্রুত সংস্কারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘জনগণের তো অনেক প্রত্যাশা ছিল গণ-অভ্যুত্থানের পরে, এই সরকারের পক্ষ থেকে এবং এমনকি আমাদের পক্ষ থেকেও। ফলে আমাদের সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ করতে হবে।’
দেশের মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে দেশের। মানুষের একটা ভয় আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সবকিছু আগের মতো হয়ে যাচ্ছে কি না, যাবে কি না। নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদ আসবে কি না, স্বৈরতন্ত্র আসবে কি না, মানুষের সে কথা বলার জায়গাটা থাকবে কি না। ৫ আগস্টের পরে আমরা দেখেছি যে, দেশে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি নতুন করে শুরু হয়েছে। আবার অন্যদিকে আমরা সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থান দেখছি।’
দেশের নানামুখী সংকটের কথা জানিয়ে এনসিপি নেতা বলেন, ‘দেশে কিন্তু নানামুখী সংকট আছে। আবার পতিত স্বৈরাচারী শক্তি, তারা তো নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে, তাদের সঙ্গে বহু নানান বৈদেশিক শক্তি জড়িত। ফলে আমরা কিন্তু একটা সংকটের মুখেই আছি।
‘এই সংকটের মধ্যে আমাদের যেমন জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন, আবার এই জাতীয় ঐক্যের ভেতরে আমাদের নিজেদের দলগুলোর ভেতরে যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেই সমস্যাগুলোও সমাধান করে আমাদের এক জায়গায় থাকতে হবে।’
এককভাবে সরকার গঠন সম্ভব নয় উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এখন কেউ যদি মনে করে, সে এককভাবেই সব নেতৃত্ব দেবে অথবা সরকার গঠন করে ফেলবে, এটা আসলে সম্ভব হবে না। যদি এই ন্যূনতম ঐক্য না থাকে দেশের সবগুলো পক্ষের মধ্যে, ফলে এককভাবে সরকার গঠন করা এবং সেই সংসদ ও সরকার টিকিয়ে রাখা কারও পক্ষে সম্ভব হবে না।
জনগণের যে ন্যূনতম আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল; সংস্কার ও বিচার—এই দাবিগুলোকে উপেক্ষা করে যদি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হয়, সেটিও আসলে টেকসই হবে না।’
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘একটা টেকসই পরিবর্তনের জন্য, স্থিতিশীল পরিবর্তনের জন্য অনেক সংস্কার আমরা চেয়েছিলাম, সেটা হয়নি। কিন্তু সংবিধানের অল্প কিছু জায়গায় আমরা ঐকমত্য হয়েছি, কিছু গণতান্ত্রিক, যেটা একটা স্পেস আমাদের তৈরি করে দেবে, ন্যূনতম এই সংস্কার নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগোতে চাই।
‘সেই জায়গায় যদি বাধা তৈরি হয়, সেই জায়গায়ও যদি সরকারের জায়গা থেকে কোনো গড়িমসি তৈরি হয়, তাহলে এই সরকারকে কিন্তু জনগণের মুখোমুখি হতে হবে এবং যারা বাধা দেবে, তাদেরও জনগণের মুখোমুখি হতে হবে।’
জোট গঠন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা কারও মুখাপেক্ষী নই, কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে আমরা রাজনীতি করব না। কিন্তু নির্বাচনে কৌশলগত কারণে বা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে যদি কোনো ধরনের সমঝোতা প্রয়োজন হয়, আমরা সেটার জন্য ওপেন আছি। আমরা এইটুকুই বলছি। কিন্তু আমরা কার সঙ্গে জোট হবে কি হবে না, সেটার ওপর বসে নেই, সেটার ওপর নির্ভর করে নেই। আমরা আমাদের মতোই কার্যক্রম করছি এবং আমরা আমাদের মতো প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।’
নাহিদ আরও বলেন, ‘জনগণের আমাদের নিয়ে অনেক প্রত্যাশা আছে। আমাদের তারা একটা স্বতন্ত্র জায়গায় দেখতে চায় এবং পুরোনো দলগুলোর প্রতি জনগণের অনীহা আছে। আওয়ামী লীগ তো একটা ফ্যাসিস্ট রূপ নিয়েই ছিল, জনগণ তাকে বিতাড়িত করেছে।
‘এ ছাড়া যে দলগুলো আছে, গত ১৬ বছর তাদের ভূমিকা, জনগণের পক্ষে সঠিকভাবে দাঁড়াতে না পারা এবং ঐতিহাসিকভাবেও অনেক দলের অনেক ধরনের ব্যাগেজ (খারাপ নজির) থাকার কারণে কিন্তু জনগণের নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা সমাজে তৈরি হয়েছে।’
