জাতীয় নির্বাচন: ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাবে বিএনপি

Bangla Post Desk
ইউএনবি
প্রকাশিত:১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৪ পিএম
জাতীয় নির্বাচন: ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাবে বিএনপি

আগামী ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ধরে সরাসরি জনসংযোগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটি ব্যাপকভাবে ভোটারদের আস্থা পুনঃস্থাপন, প্রতিপক্ষের প্রচারণা মোকাবিলা ও নির্বাচনী মাঠে শক্তিশালী উপস্থিতি নিশ্চিতের প্রচেষ্টায় ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “আমাদের ‘ডোর টু ডোর’ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে নারী ও যুবসমাজকে সক্রিয় করা এবং গত কয়েক বছরে দলের কিছু নেতার কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত আস্থা পুনঃস্থাপন করা।”

এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সমর্থকদের নির্বাচনমুখী করার জন্য বিএনপি ১৫০টিরও বেশি আসনে প্রার্থীদের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের পরিচয় করানোর পরিকল্পনা করেছে বলে জানান তিনি।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘সম্প্রতি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ—ডাকসু, জাকসু নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি এবং ইসলামি দলগুলোর সাম্প্রতিক কর্মসূচির কারণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দলের নীতিনির্ধারকদের দেশব্যাপী সরাসরি গণসংযোগ ও প্রচারণা জোরদার করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।’

তার মতে, ‘বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেদের কিছু ভুল বুঝতে পেরেছে, বিশেষ করে ডাকসু নির্বাচনের পর। আমাদের প্রচারণার উদ্দেশ্য হলো সেই ত্রুটিগুলো জনগণের কাছে স্বীকার করে আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।’

‘ফলে নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে দলের নেতা-কর্মীরা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে সরকারি ক্ষমতা না থাকলেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে নিজেদের গুরুত্ব ও সততা প্রমাণ করেছে বিএনপি।’

‘ডোর টু ডোর’ কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, ভারত ও অন্যান্য সংবেদনশীল ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান নিয়ে ছড়ানো নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলা করা হবে বলে জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, বৈঠকে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলগুলোর ঘোষিত কর্মসূচিও পর্যালোচনা করা হয়েছে। এগুলোকে রাজনৈতিক দরকষাকষির অংশ হিসেবে দেখছি। তবে এর বাইরে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাব।

ওই বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রচারণায় শুধু পুরুষ নেতা-কর্মীরাই নন, নারী নেতা-কর্মীরাও সরাসরি অংশ নেবে। আমরা মানুষকে বোঝাব, কেন নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি।’

দলটির স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য জানিয়েছেন, বিএনপি অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যাতে প্রতিটি আসনে একজন প্রার্থী নিশ্চিত থাকে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই স্থানীয়ভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং এড়িয়ে দলীয় শৃঙ্খলার মধ্যে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সাম্প্রতিক সময়ে জুলাই সনদ ও পিআর পদ্ধাতির নির্বাচনের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তবে বিএনপি মুখোমুখি রাজনীতি এড়িয়ে জনসংযোগে মনোযোগ দিচ্ছে। দল জনগণের কাছে তাদের অবস্থান ও নির্বাচনের ভিশন ব্যাখ্যা করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালাবে।’

জনগণের মধ্যে বিএনপিকে নিয়ে ভুল ধারণা দূর করতে এবং কেন কিছু সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করতে এই কর্মসূচি সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনও বলেছেন, ‘আমরা জনগণের কাছে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাব। আমাদের লক্ষ্য জনগণের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান শেয়ার করা, সরাসরি অন্য দলের কর্মসূচি মোকাবিলা করা নয়।’

তবে এই প্রচারণা কখন শুরু হবে তা রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মোশাররফ হোসেন বলেন, জামায়াত ও অন্যান্য দল তাদের দাবিসহ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো সরকারের দায়িত্ব। কোনো দল যেকোনো কিছুর দাবি করতে পারে, সে বিষয়ে সরকারকেই প্রতিক্রিয়া দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। ইতিহাসে দেখা গেছে, ছাত্রনেতারা ক্যাম্পাসে সফল হলেও সংসদ নির্বাচনে তার প্রভাব দেখা যায়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে যাবে বা রাজপথে আন্দোলন করবে, এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা কোনো দলকে শত্রু মনে করি না। নির্বাচনকালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, তবে আমরা সব দলকে রাজনৈতিক বন্ধু ও সঙ্গী মনে করি। জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে রাজনীতি করতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, জামায়াত ও কিছু ইসলামি দল তাদের দাবিসহ রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি তাদের বার্তা, বক্তব্য ও মতামত জনগণের কাছে পৌঁছে দেবে, এবং জনগণ তা বিচার করবে।
এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘জনসংযোগের বিভিন্ন মাধ্যম, যেমন: মিছিল, র‌্যালি, জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে কর্মসূচি সফল করা হবে। বিএনপির অবস্থান কী, জনগণের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া এবং জনসমর্থন অর্জন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’