টিএসসিতে রাজাকারদের ছবি টানানোর ঘটনাটি অবিশ্বাস্য: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পরই বামপন্থিদের কর্তব্য ছিল, সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করা। কিন্তু এক বছর চলে গেছে, সেটি হয়নি। এই সুযোগে বুর্জোয়ারা শক্তিশালী হয়ে উঠছে, ধর্মনিরপেক্ষ বুর্জোয়া, সেক্যুলার বুর্জোয়া এবং নন–সেক্যুলার বুর্জোয়া, ধর্ম ব্যবসায়ী বুর্জোয়া। একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা, টিএসসিতে আলবদর–রাজাকারদের ছবি টানানো হচ্ছে। এই চেষ্টা আরও শক্তিশালী হবে, যদি না বামপন্থিরা ঐক্যবদ্ধ থাকে। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তারাও বুর্জোয়া, ব্যক্তিমালিকানায় বিশ্বাস করে। সে জন্য আমরা যারা সমাজ পরিবর্তন করতে চাই, তাদের একত্র হয়ে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করতে হবে।'
শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা আয়োজিত ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'চব্বিশের এই অভ্যুত্থানকে বিপ্লব বলা হচ্ছে। তবে এটা শুধুই একটা সরকারের পতনমাত্র। আসল বিপ্লব হচ্ছে সামাজিক বিপ্লব। সামাজিক বিপ্লবের মধ্য দিয়েই সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের মুক্তি আসবে। কিন্তু বাংলাদেশ এখন ধনীদের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসকেরা লুণ্ঠন করে, সম্পদ পাচার করে। যেটা এখন বাংলাদেশে চলছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সরকার পতনের মাধ্যমে মনে হয়েছিল, ফ্যাসিবাদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু পুঁজিবাদী ফ্যাসিবাদ চরম মাত্রায় রূপ নিয়েছে, যার কারণে দক্ষিণপন্থিরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদীদের আধিপত্য ঘটছে।'
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'আমাদের করণীয় হচ্ছে, সামাজিক বিপ্লব গড়ে তোলা, যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাস করে, তাদের নিয়ে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করতে হবে। এই যুক্ত ফ্রন্ট ৫৪–এর যুক্ত ফ্রন্টের মতো হযবরল যুক্ত ফ্রন্ট হবে না। এই যুক্ত ফ্রন্ট হবে বামপন্থিদের। এই যুক্ত ফ্রন্ট শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই যুক্ত ফ্রন্টের ওপর। একা বিচ্ছিন্নভাবে সম্ভব নয়, ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের মতাদর্শের পার্থক্য থাকলেও সামাজিক বিপ্লবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।'
সভায় ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।