সাগরের পাড়ে গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি, ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৩৫ পিএম
সাগরের পাড়ে গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি, ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দেওয়া কারণ দর্শানো নোটিশের ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। জবাবে তিনি লেখেন, ‘আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম, তবে এই ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করা। সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি—গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনও অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।’

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ কথা জানান তিনি। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিবের (দফতর) সালেহ উদ্দিন সিফাত মাধ্যমে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের কাছে লিখিত জবাব দেন নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘৫ আগস্ট আমার কোনও পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না। দল থেকেও আমাকে এ সংক্রান্ত কোনও দায়িত্ব বা কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়নি। ৪ আগস্ট রাতে দলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার কোচিং অফিসের সহকর্মীর ফোন ব্যবহার করে আমাকে জানায়—সে তার স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে দুদিনের জন্য ঘুরতে যাবে। আমি তাকে আহ্বায়ককে জানাতে বলি, সে বলে বিষয়টি জানাবে এবং আমাকেও জানাতে বলে—যেহেতু তার নিজস্ব ফোন পদযাত্রায় চুরি হয়ে গিয়েছিল।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী লেখেন, ‘৪ আগস্ট রাতে পার্টি অফিসে আমি আহ্বায়কের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানাই। একই রাতে আমি সদস্য সচিবের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি এবং জানতে পারি—রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে দল থেকে তিন জন প্রতিনিধি যাচ্ছেন এবং সেখানে আমার কোনও কাজ নাই। আমি কোনও দায়িত্বে না থাকায় এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সফরসঙ্গী হিসেবে সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।’

তিনি লেখেন, ‘কক্সবাজার পৌঁছানোর পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে—আমরা নাকি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাই, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে জানায় সেখানে পিটার হাস নামে কেউ নেই। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন। এই গুজব একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা। অতীতেও আমি এই হোটেলে থেকেছি এবং কখনও কোনও বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। অতীতেও আমি বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি কিন্তু ঘুরতে আসলে দলের বিধিমালা লঙ্ঘন হয়, এমন কোনও বার্তা আমাকে কখনও দল থেকে দেওয়া হয়নি।’

ফেসবুক পোস্টে নাসীরুদ্দীন লেখেন, ‘পরিস্থিতির আলোকে, আমি মনে করি শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয়। আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র। তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব দিয়েছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদর্শন হিসেবে। ’

“আমার বক্তব্য স্পষ্ট: ‘ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়’। কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।”