পুশইন করতে হলে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের করুন, শেখ হাসিনাকে করুন: নাহিদ ইসলাম


সীমান্তে অবৈধ পুশইন প্রসঙ্গে ভারতকে উদ্দেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘পুশইন করতে হলে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের পুশইন করুন, শেখ হাসিনাকে পুশইন করুন। আমরা বিচারের মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো।’
রবিবার (২৭ জুলাই) বিকালে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শেরপুর শহরের থানার মোড় শহীদ স্কয়ারে আয়োজিত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে এক দফা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। সেই আমাদের কোটা সংস্কার আন্দোলন। কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান। যার মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে দিল্লিতে পালিয়ে ছিল। সেই দিল্লিতে শেখ হাসিনা বসে রয়েছে। আওয়ামী লীগের হাজারো সন্ত্রাসীকে দিল্লি আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এই শেরপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত পুশইন করে বাংলাদেশের জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এ পুশইনের বিরোধিতা করে ভারত সরকারকে স্পষ্ট করে বলছি, সীমান্তে আমরা কোনও হতাকাণ্ড ও পুশইন মেনে নেবো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে দেশব্যাপী জুলাই পদযাত্রা হচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছরের মধ্যে আমরা কোনও দৃশ্যমান বিচার দেখিনি। আওয়ামী লীগের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় রয়ে গেছে। প্রশাসনও ঘাপটি মেরে বসে আছে। আমরা গোপালগঞ্জে দেখেছি কীভাবে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছোবল মারতে উঠতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, গোপালগঞ্জ কেন, বাংলাদেশের আর কোনও জায়গায় আমরা মুজিববাদকে দাঁড় করতে দেবো না। কারণ এখনও প্রশাসনে পুলিশরা আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের, এমপিদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
নাহিদ ইসলাম উন্নয়নে শেরপুরের পিছিয়ে থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘শেরপুর একটি জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা। এই শেরপুরে প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে বন্যার কারণে মানুষ দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত হয়। শেরপুরে যে বনভূমি রয়েছে সেই বন উজাড় করার ফলে হাতি লোকালয়ে চলে আসে। প্রতি বছর হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাচ্ছে। আমাদের শেরপুরে হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসা সেবা নাই, শিক্ষাব্যবস্থা পর্যাপ্ত নাই, তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান নাই। গত ৩০ বছর শেরপুর শাসন করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু শেরপুর কোনও উন্নয়ন পাইনি। উন্নয়ন পেয়েছে শুধু আওয়ামী দোসররা, যারা দেশের টাকা লুট করে এখন বিদেশে পলাতক রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেরপুরের সন্তানরা শহীদ হয়েছেন, সারা দেশের জনগণ রাজপথে নেমেছেন সেই শেরপুরের উন্নয়নের জন্য। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সেই প্রকৃত উন্নয়নের সুষম রাজনীতি করতে চায়।’
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘দেশব্যাপী সংস্কারের আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা বলেছি, ৫ আগস্টের মধ্যে যেকোনও মূল্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে। যদি ঘোষণা না করা হয় আমরা ৩ আগস্ট ঢাকায় আসছি, তখন জুলাই সনদ আদায় না করে আমরা ঢাকার শহীদ মিনার ছাড়বো না।
‘জুলাই সনদে আমরা বলেছি, যে কারণে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি হলো সেই রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাষ্ট্র রাখা যাবে না। একটি রাষ্ট্রে শুধু প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা, সেই রাষ্ট্রের আমরা পরিবর্তন চাই। এ জন্য আমরা বলেছি, উচ্চকক্ষ লাগবে। আমাদের উচ্চকক্ষ অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারি। যদি মৌলিক সংস্কার না হয়, রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তনে জুলাই সনদে না আসে তাহলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদে সমর্থন দেবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আরও বলতে চাই, জুলাই সনদের পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র ছাত্র-জনতার দাবি ছিল, কিন্তু সরকার এ দাবিটি উপেক্ষা করেছিল। কিন্তু ৩ আগস্ট আমরা এ দাবি উপেক্ষা করার সুযোগ দেবো না। জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই জারি করতে হবে এবং নতুন সংবিধানে তা যুক্ত করতে হবে।
‘প্রিয় সংগ্রামী শেরপুরবাসী, আপনারা জানেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে ৩ আগস্ট ঢাকায় জড়ো হচ্ছে। সেখানে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
পথসভায় এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।