জামায়াত নির্বাচনমুখী দল, আর্ত-মানবতার মুক্তি চায়: ডা. শফিকুর রহমান

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৬ মে ২০২৫, ১১:৪৩ পিএম
জামায়াত নির্বাচনমুখী দল, আর্ত-মানবতার মুক্তি চায়: ডা. শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, তার দল শুধুমাত্র ভোট বা নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল নয়, বরং আর্ত-মানবতার মুক্তি ও সমাজের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন করতে চায়।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিবর্তন করতে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।’

শুক্রবার (১৬ মে) বিকালে রাজধানীর মগবাজারস্থ আল ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত থানা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্যদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চায়। আমরা এমনভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে চাই—যাতে রাষ্ট্রই সকল মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে।

তিনি বলেন, জামায়াত এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে মানুষে মানুষে কোনো বৈষম্য বা ভেদাভেদ থাকবে না। কিন্তু অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা একাজ করেনি বরং তারা আত্মস্বার্থ, ব্যক্তিস্বার্থ, শ্রেণি স্বার্থ, গোষ্ঠী স্বার্থ, সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ রক্ষাসহ রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করেছে। তাই জামায়াতকে সবসময় স্রোতের বিপরীতে কাজ করতে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জামায়াতপ্রধান বলেন, আমরা নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আর ইসলামী আন্দোলনের ওপর জুলুম-নির্যাতন নতুন কিছু নয় বরং নবী-রাসূলগণও তা থেকে রেহাই পাননি। অবিশ্বাসীদের জুলুম- নির্যাতনের মুখেই আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ঈসাকে (আ.) দুনিয়া থেকে নিজের কাছে ওঠে নিয়েছেন। তাই যেকোনো জুলুম- নির্যাতনে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে হতোদ্যম হলে চলবে না, বরং সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ময়দানে আপোষহীন ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের পথচলা অতীতে নির্বিঘ্ন ছিল না— এখনো নয়। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তদানীন্তন জালিম সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে তারা সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। মামলা, হামলা, গণগ্রেপ্তার, রিমান্ড, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুপ্তহত্যা ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী। এমনকি জুডিসিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে আমাদের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো জীবিত আছেন। বিপ্লব পরবর্তী অনেক সময় পার হয়ে গেছে। আগামী ২৭ তারিখ তার মামলার রায় রয়েছে। তিনি এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য সকলকে আল্লাহর তায়ালার সিজদাবনত হওয়ার আহ্বান জানান।

জামায়াত আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি করে না, বরং আমরা ময়দানে জানমালের কোরবানির মাধ্যমে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রচলিত সকল প্রকার অনিয়মের ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চাই। এ কাজ করতে গিয়েই আমাদের অনেক ভাই শাহাদাতকে হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছেন। স্বজন হারিয়েছেন অনেকেই। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে— আমরা মজলুম হলেও জালেম হবো না। দ্বীন প্রতিষ্ঠাকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসাবে গ্রহণ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। আর অনুষ্ঠানের শুরুতে দারস পেশ করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা আব্দুস সামাদ।

এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও , ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দিন, মু. আতাউর রহমান সরকার, মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, শাহ আলম তুহিন ও ইঞ্জিনিয়ার নোমান আহমেদি প্রমুখ।