তথ্যপ্রযুক্তি খাতে টেকসই উন্নয়নে বেসিসের সেমিনার

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে টেকসই উন্নয়নে বেসিসের সেমিনার
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের আইসিটি খাতে অসাধারণ সাফল্য, সম্ভাবনা এবং আগামীর গতিশীল বিশ্বের বৈশ্বিক ডিজিটাল হাবে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তুলে ধরার লক্ষ্যে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫, বাংলাদেশ- চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র, পূর্বাচলে আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ: দ্য ইমার্জিং আইসিটি পাওয়ার হাউজ’ শীর্ষক সেমিনার।  

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পলিসি অ্যাডভাইজার (সমন্বয় এবং সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, জাইকার বাংলাদেশ প্রধান ইচিগুচি তোমোহিদে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক বেবী রানী কর্মকার। এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে জেট্রো এর প্রধান প্রতিনিধি ইউজি আন্দো, কোট্রার নির্বাহী পরিচালক সামসু কিম এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদানকালে বেসিস প্রশাসক ড. মুহম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, “দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে বেসিস  ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৮টি সদস্য থেকে শুরু করে আজ ২,৬৫০টিরও বেশি সফল সদস্য প্রতিষ্ঠানের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে। এই যাত্রায়  লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিশ্বমানের স্থানীয় উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা তৈরি করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৩৭টিরও বেশি দেশে ৮৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আইসিটি পরিষেবা রপ্তানি করেছে। নতুন নতুন উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করতে, সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানাই।”

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বেসিস সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান রাফেল কবির। তিনি বলেন, "বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বাস্তবায়নে দক্ষ জনশক্তি তৈরি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ মেধাবী যুবশক্তি রয়েছে, যাদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনার মাধ্যমে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈশ্বিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারি। বেসিস এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, এবং এই সেমিনার আমাদের অগ্রগতির পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।" 

সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন বেসিস সহায়ক কমিটির সদস্য ফিদা হক। বেসিস সহায়ক কমিটির সদস্য রাইসুল কবির ও বেসিস সদস্য সৈয়দ মোশাররফ আলী তথ্যপ্রযুক্তিতে তাদের নিজ নিজ কোম্পানির সফলতার গল্প তুলে ধরেন। এছাড়াও এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সফলতার গল্প ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা আইটিসি’র প্রযুক্তি উন্নয়ন খাতের সমন্বয়ক মার্টিন ল্যাবে। 

সেমিনারে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈশ্বিক নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডাটা আর্কিটেকচার (BNDA) নকশা বাস্তবায়ন, সঠিক আইসিটি মাস্টারপ্ল্যানের রূপপকল্প প্রণয়ন এবং অপরিকল্পিত হাইটেক পার্কগুলোর সংস্কার করে তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামোকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ থেকে ৮ মিলিয়ন দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদার তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সঠিক ভাবমূর্তি নির্মাণ, পূর্বে গৃহীত প্রকল্পসমূহের পর্যালোচনা এবং শক্তিশালী ডাটা গভর্নেন্স কাঠামো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (GDP) ৫% অবদান রাখার লক্ষ্য অর্জন করতে চাই। উদীয়মান শিল্পগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে, আমি বেসিসকে আরও পরামর্শমূলক এ ধরনের সেমিনার আয়োজনের আহ্বান জানাই।”   

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক বেবী রানী কর্মকার তরুণ উদ্ভাবকদের সৃজনশীলতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নির্মাণে তাদের অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই বছরের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২৫-এ দর্শনার্থীদের প্রবেশের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা প্রযুক্তি ব্যবহারের দারুণ উদাহরণ। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে এই সেমিনারটি বেসিস এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর যৌথ উদ্যোগে ডিআইটিএফ ২০২৫-এর অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে।”  

সেমিনারে ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন বেসিস সহায়ক কমিটির সদস্য (অর্থ) ফৌজিয়া নিগার সুলতানা। বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সাফল্যমন্ডিত পথ অতিক্রম করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়ে, আমরা বিশ্ব মঞ্চে উচ্চমানের এবং সাশ্রয়ী ডিজিটাল সমাধানের একটি শীর্ষস্থানীয় নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হিসেবে নিজেদের অবস্থান উন্নত করতে চাই।” 

সেমিনারে এই সেক্টরের বিশাল সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়। ই-ট্যাক্স ফাইলিং সিস্টেম, ভূমি নামজারি প্রক্রিয়া এবং টেলিহেলথ কন্টাক্ট সেন্টারের মতো রূপান্তরমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের গল্প তুলে ধরা হয়— যা মূলত বেসিস সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত।