ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা

Bangla Post Desk
ইউএনবি
প্রকাশিত:২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা

যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও ঢাকার রাস্তায় ফিটনেসবিহীন ও নিবন্ধনবিহীন যানবাহনের আধিপত্য অব্যাহত থাকায় সড়ক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, কর্তৃপক্ষের কেবলমাত্র ফিটনেট ছাড়পত্র না থাকা নিবন্ধিত যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বাধ্যতামূলক ফিটনেস টেস্ট ছাড়াই হাজার হাজার অনিবন্ধিত যানবাহন অনিয়ন্ত্রিত চলাচল করছে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

ইউএনবির সংবাদদাতা বিভিন্ন রুট পরিদর্শন এবং ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এই উদ্বেগজনক দৃশ্যটি জানতে পেরেছে। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বিষয়টি মোকাবিলায় তাদের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করেছেন। কারণ বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত অনেক যানবাহন প্রয়োজনীয় ফিটনেস পদ্ধতি এড়িয়ে যায়।

ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন, ‘শুধু মামলা দায়ের করলেই সমস্যার সমাধান হবে না,’ গাড়ির মালিক এবং পরিচালনায় থাকা ব্যক্তিরা প্রায়শই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ফাঁকফোকর ব্যবহার করে।

এ সমস্যা নিরসনে গত ২৯ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করে মাঠ পর্যায়ের সব ইউনিটকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তায় না চালানোর অনুমতি না দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।

সরকারি তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৬ লাখ ১৭ হাজার গাড়ি বাধ্যতামূলক ফিটনেস পরীক্ষা করায়নি।

সাইনবোর্ড ও আমিনবাজার এলাকার মধ্যে চলাচলকারী 'লাভলী' নামের একটি বাসের নিয়মিত যাত্রী আব্দুর রহিম বলেন, ‘অপারেটররা ফিটনেসের তোয়াক্কা করে না।’

মোহাম্মদ হৃদয় নামে এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়, কিন্তু মালিকরা প্রায়ই ঝামেলার কারণে তৃতীয় পক্ষের কাছে কাজটি দেন।

জামিরুদ্দিন নামে এক চালক অকপটে বলেন, তারা রাস্তায় ফিটনেস নিয়ম এড়িয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিউটি সার্জেন্ট স্বীকার করেছেন, যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে অনেক সময় আপস করা হয়। তিনি বলেন, ‘পরিবহন খাত কীভাবে কাজ করে তা সবাই জানে।’

ডিএমপি ট্রাফিকের অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার নাজমুল হাসান গাড়ির ফিটনেস নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'ফিটনেস সার্টিফিকেট না থাকায় গত তিন মাসে আমরা ২৩ হাজার মামলা করেছি। ব্যক্তিগত গাড়ির তুলনায় বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত যানবাহনে ফিটনেসের ঘাটতি বেশি থাকে।’

আরও পড়ুন: হয়রানি কমাতে অনলাইন কর পদ্ধতি সংস্কারের পরিকল্পনা এনবিআরের

তিনি আরও জানান, কর্তৃপক্ষ নিয়মিত চেকিং এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাজেয়াপ্ত করে সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে। ‘আমরা আমাদের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যানবাহন বাজেয়াপ্ত করেছি, বিশেষ করে ২০ বছরের বেশি পুরনো যানবাহন। কিছু গাড়ি যথাযথ প্রক্রিয়ার পরে তাদের মালিকদের কাছে ফিরত দেওয়া হয়েছে, তবে পুনরায় চালানোর আগে তাদের অবশ্যই ফিটনেসের শর্ত মেনে চলতে হবে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সব যানবাহনের বার্ষিক ফিটনেস পরীক্ষা এবং সার্টিফিকেট নবায়নের বাধ্যতামূলক করে। বৈধ ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া চালানো একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে জরিমানা এবং কারাদণ্ডও হতে পারে।

তবে জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে বিআরটিএ'র কার্যকরভাবে সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাস পরিচালনাকারীরা জানান, ঢাকায় ৭৫টি কোম্পানির তিন হাজার ৯৭৪টি এবং ১২০টি কোম্পানি সারা দেশে পাঁচ হাজারের বেশি বাস পরিচালনা করে।

১৫০১ সিসি থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত প্রাইভেটকার মালিককে এখন ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার খরচ ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দিতে হবে। যা আগে ছিল ৩০ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের তৎপরতা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে

ফিটনেসবিহীন যানবাহনের পরিণতি ভয়াবহ, কারণ সড়ক দুর্ঘটনার হার ক্রমাগত বাড়ছে।

বিআরটিএ'র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৪ হাজার ৪৯৪টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪ হাজার ১৫৩ জন। আর গত বছরের একই সময়ে ৩ হাজার ৭২৭টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪ হাজার ১৬ জন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, একই সময়ে ৫ হাজার ৪৮৫টি দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৫৯৮ জন এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী ৪ হাজার ৬২০টি দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৭৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান হতাহত এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহনের প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা একমত যে, এই সংকট মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী প্রয়োগ, বিআরটিএর জন্য আরও বেশি সম্পদ এবং পরিবহন খাতজুড়ে জবাবদিহিতা প্রয়োজন।