হাদিকে হত্যাচেষ্টা
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ফিল্মি স্টাইলে দেশ ছাড়ে দুই হামলাকারী
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের ঢাকা ছেড়ে পালানোর প্রক্রিয়াটি যেন কোনো থ্রিলার সিনেমার দৃশ্যকেও হার মানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিবিড় নজরদারির ভেতরই প্রধান দুই সন্দেহভাজন দেশ ছাড়তে সক্ষম হয়েছে হামলার দিনই।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হামলার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ও আলমগীর হোসেনকে শনাক্ত করে এবং প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের গতিবিধি অনুসরণ করতে শুরু করে।
তবে সন্দেহভাজনরা এক্ষেত্রে একটি কৌশলের আশ্রয় নেয়।
তারা তাদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো (যেমন মোবাইল ফোন) চালু রাখলেও সেগুলোর বারবার স্থান পরিবর্তন করায়। পুলিশ যখন সেই ডিভাইসের অবস্থান ধরে ধরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছিল, তখন সন্দেহভাজনরা রাজধানী থেকে নিরাপদে বের হওয়ার সুযোগ পায়।
হাদিকে গুলি করার পরপরই হামলাকারীরা দ্রুত ঢাকা ছাড়ে।
পল্টনের কালভার্ট রোড থেকে মোটরসাইকেলে নয়াপল্টন হয়ে শাহবাগ, বাংলামটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট হয়ে আগারগাঁও এলাকা দিয়ে মিরপুরে পৌঁছায়।
এরপর তারা প্রাইভেটকারে করে আশুলিয়া হয়ে গাজীপুর দিয়ে সড়কপথে ময়মনসিংহ যায়।
ময়মনসিংহের ব্রিজের পাড় থেকে বাহন পরিবর্তন করে আরেকটি প্রাইভেটকার নিয়ে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ময়মনসিংহ সীমান্তের স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রোল পাম্পে প্রাইভেটকারটি থামার পর তিনজন যুবক এসে ফয়সাল ও আলমগীরকে মোটরসাইকেলে করে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যায়।
রাত আড়াইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর তারা ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী দেশের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার একটি পৌরসভা এলাকার তুরায় পৌঁছায়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তারা সেখানেই অবস্থান করছিল।
হামলার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় ছিল। এমনকি হামলাকারীদের জন্য অর্ধকোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয় এবং সীমান্তে সতর্কতা জারি করে তাদের পাসপোর্ট ব্লক করার খবরও আসে। এত কড়া নজরদারির মধ্যেও 'মোস্ট ওয়ান্টেড' এই দুই আততায়ীর দেশ ছেড়ে পালানোর ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র এই দুজনের পালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও, এখন পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তি আসেনি।