ভারতের সঙ্গে ১০ চুক্তি বাতিলের তালিকা সঠিক নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা


ভারতের সঙ্গে ১০টি চুক্তি বাতিল হয়েছে বলে যে তালিকা সামাজিক মাধ্যমে এসেছে, সেটা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যে তালিকাটা এসেছে এটা কোনো একজন প্রচার করেছেন। সেটা সম্ভবত কোনো একজন উপদেষ্টা কমেন্টসহ আবার পোস্ট করেছেন। তাঁর কমেন্ট নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। হয়তো এটা তিনি না করলেও পারতেন। যে তালিকাটা এসেছে ওখানে, এটা সঠিক নয়। এর অধিকাংশ চুক্তির অস্তিত্ব নেই। একটি মাত্র চুক্তি অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে। বাকিগুলোর কয়েকটি আছে যে বিভিন্ন পর্যায়ে আছে এবং ঠিক ওই নামে নেই। অন্য রকম ব্যাখ্যা আছে।
তালিকায় থাকা চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম রেল সংযোগ প্রকল্প সামাজিক মাধ্যমে বাতিল বলে উল্লেখ করা হলেও এ রকম কোনো প্রকল্প নেই। অভয়পুর-আখাউড়া রেলপথ সম্প্রসারণ সামাজিক মাধ্যমে বাতিল উল্লেখ করলেও এমন প্রকল্প নেই। সামাজিক মাধ্যমে আশুগঞ্জ-আগরতলা করিডোর বাতিল উল্লেখ করা হলেও হুবহু এ নামের কোনো প্রকল্প নেই। তবে ‘আশুগঞ্জ-সরাইল-ধারখার প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প চলমান আছে। ওই প্রকল্পের আওতায় শুধু একটি প্যাকেজ বাতিল হয়েছে (প্যাকেজ ৩: ধারখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর)।
তৌহিদ হোসেন জানান, ফেনী নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সামাজিক মাধ্যমে বাতিল উল্লেখ করা হলেও এ নামে কোনো প্রকল্প নেই। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ত্রিপুরার সাবরুম শহরে পানীয় জল সরবরাহের জন্য এক দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের জন্য ২০১৯ সালে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ওই সমঝোতা স্মারকটি বাতিল হয়নি। কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন প্রকল্প সামাজিক মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে স্থগিত হিসেবে। এ নামে কোনো প্রকল্প নেই। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদী কুশিয়ারা থেকে পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০২২ সালে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সমঝোতা স্মারকটি স্থগিত হয়নি। বন্দরের ব্যবহার-সংক্রান্ত সড়ক ও নৌপথ উন্নয়ন চুক্তি সামাজিক মাধ্যমে বাতিল উল্লেখ করা হলেও হুবহু এ নামে কোনো চুক্তি নেই। তবে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৮ সালে চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তিটি বহাল আছে।
তিনি জানান, ফারাকা বাঁধ-সংক্রান্ত প্রকল্পে বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতা প্রস্তাব সামাজিক মাধ্যমে বাতিল হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এ রকম কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবগত নয়। সামাজিক মাধ্যমে সিলেট-শিলচর সংযোগ প্রকল্প বাতিল হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এ রকম কোনো প্রকল্প নেই। পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ চুক্তি সামাজিক মাধ্যমে বাতিল উল্লেখ করা হলেও ভারতের সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি হয়নি। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের আওতায় ভারতের নুমালীগড় থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত যে পাইপলাইন আছে, তা সম্প্রসারণের জন্য ভারতের সঙ্গে একবার প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।
উপদেষ্টা বলেন, ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প (মিরসরাই ও মোংলা) সামাজিক মাধ্যমে বাতিল উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় ঋণচুক্তির (এলওসি) আওতায় ওই প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নের বিষয়টি বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান। আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি সামাজিক মাধ্যমে পুনর্বিবেচনার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, চুক্তিটি পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি (১৯৯৬) সামাজিক মাধ্যমে নবায়ন/পুনর্বিবেচনা উল্লেখ করা হলেও ২০২৬ সালে চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি নবায়নের জন্য আলোচনা হবে। সামাজিক মাধ্যমে উল্লেখ তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি (খসড়া) (২০১১): বাস্তবায়নের জন্য আলোচনায়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১০/২০১১ সালে খসড়াকৃত তিস্তা চুক্তিটি এখনও স্বাক্ষরিত হয়নি। শুধু ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানির সঙ্গে টাগ বোট চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।