এক মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত বেড়েছে ১৯ জন: এমএসএফ


চলতি বছর দেশে আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেপ্তার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। অন্যদিকে সাংবাদিক নির্যাতন, বিএসএফের পুশ ইন ও সীমান্তে হত্যার হার কিছুটা কমেছে।
বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে’ এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও নিজেদের অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে তারা।
এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ৩৬১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত মাসের তুলনায় ১২টি বেশি। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৫৩টি, দলবদ্ধ ধর্ষণ ১৩টি, ধর্ষণ ও হত্যা তিনটি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে পাঁচজন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপন চলছে, এরপরও ক্রমান্বয়ে আশঙ্কা ও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। গত মাসে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল আটটি। এ মাসে ইতিমধ্যে তা বেড়ে দ্বিগুণে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচ্চতর পর্যায় থেকে নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসবে পূজার্থীদের আশ্বস্ত করা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরও পূজার প্রাক্কালে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আশ্বস্ত হওয়ার বিষয়টি দুরূহের মধ্যে থেকে যায়।
গণমাধ্যম সূত্রে ও এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ১৬টি জেলাতে ২৯টি প্রতিমা ভাঙচুর ও ছয়টি প্রতিমাতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার, দুটি মন্দিরে চুরি ও দুটি জমি দখলসংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া এ মাসে জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের তিনটি ঘটনা ঘটেছে।
এমএসএফ বলেছে, সেপ্টেম্বর মাসে মাজারে হামলা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ১৪টি ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে রয়েছে—সিলেটের চারটি মাজার, কুমিল্লায় চারটি মাজার, রাজবাড়ীর দরবার শরিফ, রাজশাহীর খানকা শরিফ, নেত্রকোনায় পীরের আস্তানা, ময়মনসিংহে খানকা শরিফে অগ্নিকাণ্ড, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন-সম্পর্কিত মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা আগস্টে ২২৩ থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বেড়ে ৫৯৭ জন হয়েছে। সরকার পতনের পর সহিংসতাসংশ্লিষ্ট মামলায় আসামির সংখ্যা, নামসহ ৮৬ থেকে বেড়ে ৪৮৬ হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আসামি ১ হাজার ২০০ জন যোগ হয়েছে। রাজনৈতিক মামলার সংখ্যা ও গ্রেপ্তার উভয় ক্ষেত্রেই গুরুতর বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনাও বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু আগস্টে ছিল দুটি, সেপ্টেম্বরে হয়েছে সাতটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে আগস্টে মৃত্যু হয়েছিল একজনের আর সেপ্টেম্বরে মারা গেছে ২০ জন। অর্থাৎ এক মাসে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ১৯ জন।
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হুমকি ও হয়রানির সংখ্যা আগস্টে ছিল ৯৬টি, সেপ্টেম্বরে কমে ৬৩টিতে এসেছে। বিএসএফ কর্তৃক পুশ ইন আগস্টে ছিল ৩৩১টি, সেপ্টেম্বরে হয়েছে ১০৭টি। গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনা আগস্টে ছিল ২৩টি, সেপ্টেম্বরে ঘটেছে ২৪টি। আগস্টে মাজার ভাঙচুরের ঘটনা ছিল না, কিন্তু সেপ্টেম্বরে ১৬টি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে।