এক বছরে ১০ জনের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ চেয়ে দুদকের চিঠি


গত এক বছরে অন্তত দশজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারির জন্য পুলিশের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনাজীর আহমেদ, ব্যবসায়ী সাইফুল আলম (এস আলম) এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা।
বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনের ইতিহাসে এটিই প্রথমবার, যখন একইসঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একযোগে রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হলো।
দুদক জানিয়েছে, রেড নোটিশ চেয়ে পাঠানো প্রতিটি চিঠির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিস্তারিত পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, ঠিকানা এবং গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। দুদকের চিঠি পাওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ জানাবে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে যান। তার ছেলে জয় যুক্তরাষ্ট্রে, আর মেয়ে পুতুলও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এর পরপরই পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়, যাতে শেখ হাসিনা, তার সন্তান ও বোনসহ পরিবারের অন্তত ৭ সদস্যকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অযোগ্য হয়েও পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ছয়টি প্লট নিজেদের নামে বরাদ্দ নেন তারা।
এই মামলাগুলোর ভিত্তিতে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় দুদক শেখ হাসিনা, জয় ও পুতুলের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ জানায়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির চিঠিতে দুদক জানায়, মামলার তদন্তকালে জানা যায় যে এজাহারনামীয় আসামি শেখ হাসিনা বিদেশে অবস্থান করছেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার অবস্থান শনাক্ত করে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করার জন্য বিজ্ঞ আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
এতে দুদক আরও জানায়, এমন অবস্থায় বিজ্ঞ আদালতের আদেশ, গ্রেফতারি পরোয়ানা, এজাহারের কপি, চার্জশিটের কপি এবং পূরণকৃত রেড নোটিশ ফরম সংযুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হলো।
জয় ও পুতুলের বিষয়ে পাঠানো চিঠিতেও একই কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে মা ও ছেলে ও মেয়ের নাম, এনআইডি নম্বর, বাবা ও মায়ের নাম, পাসপোর্ট নম্বর এবং ঠিকানাও দেওয়া হয়েছে।
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অন্যদের রেড নোটিশ জারির চিঠিতেও একই ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রথমে পুলিশ রেড নোটিশ জারির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাবে।