‘গ্রাম আদালতকে নারী ও প্রান্তিকের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায়বিচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলা হবে’

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:১৩ পিএম
‘গ্রাম আদালতকে নারী ও প্রান্তিকের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায়বিচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলা হবে’

প্রান্তিক পর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্যে আইনী সহায়তা প্রদানে গ্রাম আদালত স্থানীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। দেশের গ্রামীণ এলাকায় দ্রুত ও সহজ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং নারী নেতৃত্ব ও প্রান্তিক জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে সঠিক সমন্বয় ও সচেতনতার প্রয়োজন।

আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘গ্রামীণ নারী ও প্রান্তিক জনগণের জন্য জেন্ডার-সংবেদনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ আদালত সেবার গুরুত্ব’ শীর্ষক জাতীয় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় পরিচালিত “গ্রাম আদালত সক্রিয় করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্প” এই বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মুমতাজ আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী, ইউএনডিপির সিনিয়র গর্ভানেন্স তানভীর মাহমুদ, সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উন্নয়ন সংস্থা, একাডেমিয়া ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। বৈঠকের সঞ্চালনায় ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় প্রকল্প পরিচালক সুরাইয়া আক্তার জাহান।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী বলেন, ‘গ্রাম আদালতকে কার্যকর ও শক্তিশালী করতে হলে নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা জরুরি। প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার ও সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সহযোগিতা প্রয়োজন। উচ্চ আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা ও ব্যয়ের বিকল্প হিসেবে গ্রাম আদালত ইতিমধ্যেই কার্যকর সমাধান হিসেবে কাজ করছে।’

প্রকল্পের জেন্ডার এনালিস্ট শামীমা আক্তার শাম্মী বলেন, ‘গ্রামীণ এলাকায় কাঠামোগত ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে নারী এবং প্রান্তিক জনগণ প্রায়ই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, তথ্যের অভাব, প্রক্রিয়ার জটিলতা, পরিবহন সমস্যা এবং সামাজিক ও পারিবারিক সীমাবদ্ধতা প্রধান চ্যালেঞ্জ। গ্রামীণ আদালত প্যানেলে নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ বাড়ানো societal barrier ও পুরুষ সদস্যদের সহানুভূতির অভাবও চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকে।’

ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত গ্রামীণ আদালতে মোট ১,৩৬,৮০৮টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬,৯৬২টি নারী আবেদনকারীর মামলা। এ সময়ে উচ্চ আদালত থেকে ১৪,২১৪টি মামলা রেফার করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলার মধ্যে ১৫% মামলা ৭৫,০০০ টাকার বেশি আর্থিক মূল্য সম্পন্ন এবং ২.৫% মামলা স্ত্রী কর্তৃক বকেয়া ভরণপোষণ আদায় সম্পর্কিত।

প্রধান অতিথি মুমতাজ আহমেদ বলেন, ‘নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের নারী ও শিশু বিষয়ক প্রকল্পে গ্রাম আদালত সম্পর্কিত সচেতনতা অন্তর্ভুক্ত করা গেলে গণ সচেতনতায় ভালো ফলাফল আশা করা যায়। বিচারকার্যে নারীদের অন্তর্ভুক্তি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। গ্রাম আদালতকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তথ্য প্রচার ও পাঠ্যপুস্তকে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’

বর্তমানে বাংলাদেশের ৬১টি জেলায় ৪৪৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়ক বিভাষ চক্রবর্ত্তী বৈঠকে প্রকল্প পরিচিতি উপস্থাপন করেন।

অন্য বক্তারা বলেন, ‘দ্রুত, সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি গ্রামীণ আদালতগুলোকে নারী ও প্রান্তিক জনগণের জন্য সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায়বিচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’