যেভাবে ভোট দেওয়া যাবে পোস্টাল ব্যালটে


আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত প্রবাসী ভোটার ও জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি) বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ভোটদান নিশ্চিতের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (এএফডি), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ডাকবিভাগ, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা (এসবি), জন্মসনদ নিবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
প্রবাসীদের ভোট সহজে গ্রহণের জন্য এসব সংস্থা প্রচার প্রচরাণাসহ সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানায়, ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যে মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হবে। এরপরে পরীক্ষামূলক (আউটকান্ট্রি ভোটিং- ওসিভি ও ইনকান্ট্রি ভোটিং- আইসিপিভি নিবন্ধন ও ট্র্যাকিং মডিউল) প্রতীক ও প্রার্থীদের সংযুক্ত করে চালাতে হবে। ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবরের পর্যন্ত মোবাইল অ্যাপের ট্রায়াল, নিরীক্ষা, ত্রুটি সংশোধন ও ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। এছাড়া ওসিভি ও আইসিপিভি এর জন্য প্রচারণা, উদ্ভূতকরণ ও ভোটার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে ইসি। যা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এতে আরও বলা হয়েছে, ১ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরে মধ্যে ব্যালট পেপার, নির্দেশিকা ও ঘোষণাপত্র মুদ্রণ করা হবে। ওসিভি ও আইসিপিভি এর জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে ১১ নভেম্বর যা চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ডাক বিভাগ খামের কাস্টমাইজেশন করবে। ভোটারদের কাছে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে ২০ নভেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ শেষ হলেও ভোটাররা ওসিভি ও আইসিপিভির আওতায় ভোট দিতে পারবে।
ভোট প্দান ও ব্যালট পেপার বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে নির্বাচনের একমাস আগে। এরপর কমিশন প্রতিটি ব্যালটে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার নাম লিখে তা সিল করে পাঠাবে। বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্যে ‘দেশের বাইরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আমরা যে সিস্টেম করেছি, পোস্টালে একটা স্ট্যাম্প লাগিয়ে দেবো। ভোটার বিদেশ থেকে অনলাইনে আমাদের এই ওয়েবসাইটে ঢুকে নাম লিস্ট করবেন বা দেশের থেকেও করতে পারবেন একই সিস্টেমে। একটা ইনকান্ট্রি, আরেকটা আউটকান্ট্রি। ভোটিং জন্য ভোটারা উনারা নিবন্ধন করবে। কে কোন সময় করবে, আমরা চার রকম ব্যক্তির নাম দিয়ে রেখেছি তার সময় দিচ্ছি। আর বিদেশ থেকে যারা দেবে তাদের জন্য কমিশন থেকে পাশ হওয়ার পর সার্কুলার জারি করবো যে এতো থেকে এতো তারিখের মধ্যে আপনি নাম নিবন্ধন করবেন।
তিনি বলেন, আগে ব্যালট পাঠালে সেই ব্যালট পেপার ফেরত আসে না, ভোট দিতেও পারে না। আর এলেও শেষের দিকে আসতো। এখন সেখানে আমরা ব্যালট পেপার না দিয়ে আমাদের যত মার্কা আছে সবগুলো মার্কা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। মার্কা দিয়ে উনি মার্কা অনুযায়ী ভোট দেবেন।
একটি পোস্টাল আনা-নেওয়া করতে ব্যালট প্রতি সরকারিভাবে ব্যয় হবে ৫০০ টাকার মতো। আর বেসরকারিভাবে এটি যেয়ে দাঁড়াবে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, গত ২৪ জুন নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগ কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর ভিত্তি করে অ্যাডভাইজরি কমিটির আইটি বেইজড পোস্টাল ব্যালটে ভোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ভোট দিতে আগ্রহীদের পোস্টাল ব্যালট পাঠানো ও ভোট শেষে তা ফেরত আনার বিষয়ে ডাকবিভাগ, ফেডএক্স, ডিএইচএল প্রতিনিধিরাও বৈঠকে মতামত তুলে ধরেন।
ডাক বিভাগ থেকে জানানো হয়, ডাক বিভাগের ইএমএস/রেজিস্টার্ড সার্ভিসে একজন ভোটারের ব্যালট পেপার প্রবাসে পাঠানো এবং ফেরত আনতে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা ব্যয় হতে পারে।
বেসরকারি প্রতিনিধিরা জানান, ১২ দিনের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট প্রবাসে ভোটারের কাছে পাঠানো ও ভোট শেষে ফেরত আনতে পারবে। এক্ষেত্রে সিল করা খাম ভোটার ও ইসি প্রতিনিধি ছাড়া কেউ খুলবে না। তাদের নিজস্ব লোকাল প্রতিনিধি ভোটারের কাছে পোস্টাল ব্যালট পৌঁছাবে এবং ভোটারকে ফোন করে ভোট দেওয়ার পর ফেরত আনবে। এজন্য একজন ভোটারের পোস্টাল ব্যালট আনা নেওয়ায় সব মিলিয়ে ৪০-৪৫ ডলার খরচ হতে পারে।
গত ২৯ আগস্ট নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কোর প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি ও আইন কানুন বিষয়ে ভালো প্রশিক্ষণ দেওয়ার জোর দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আদালতের আদেশে এক যুগ পর চাকরি ফিরে পেয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগ দেওয়া ৬০ জন নির্বাচন কর্মকর্তাকে শুধু পোস্টাল ব্যালটের জন্য প্রবাসীদের ভোটাধিকারের কাজে সম্পৃক্ত রাখা হচ্ছে।
এর আগে, ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, পোস্টাল ব্যালট ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি। আনা-নেওয়া করতে ব্যালট প্রতি ৫০০ টাকা, এরপর ছাপানোর খরচও আছে।