‘ক্যাডার বৈষম্য নিরসন না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে’


বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা জানিয়েছেন, সিভিল সার্ভিসকে জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক করতে হলে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে অন্য ক্যাডারগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত দাবি আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কনভেনশন হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি করেন।
তারা বলেন, তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদুল হক ১৯৮০ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দিয়েছিলেন, দক্ষতার ভিত্তিতে সমানাধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সরকারের ব্যর্থতায় বৈষম্য রয়ে গেছে। এরশাদ সরকার কোটাভিত্তিক ডিএস পুল গঠন করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা আজও বহাল আছে।
অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে। ফিরোজ আহমেদ বলেন, করোনা মহামারির সময় প্রশাসন ক্যাডার বিশেষজ্ঞদের মতামত ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিয়ে অঘটন ঘটিয়েছে। তিনি ড. আকবর আলী খানের বই উদ্ধৃত করে বলেন, খারাপ আমলাতন্ত্র পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে গিলে খেয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, বৈষম্যের শিকার যেই হোক, গণঅধিকার পরিষদ তাদের পাশে দাঁড়াবে।
জাতীয় পার্টির নেতা ইলিয়াছ মাতাব্বর বলেন, ২৫ ক্যাডারের ক্ষোভ ও বিক্ষোভ বিপ্লবে রূপ নেওয়ার আগেই বৈষম্য নিরসন করা উচিত। কৃষি ক্যাডারের প্রাক্তন পরিচালক ইকবাল আহমেদ চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, ‘একটা ক্যাডারের সুবিধার জন্যই কি দেশের বিপ্লব আর রক্তক্ষয়?’
বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি আমলেই ২৫ ক্যাডারের সুবিধা প্রসারিত হয়েছিল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও পরবর্তীতে খালেদা জিয়া উপসচিব পুলের মাধ্যমে সমান সুযোগ নিশ্চিত করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাডারের পরিচিতি, কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ করণীয় তুলে ধরা হয়। বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণী কাজে যুক্ত থাকলেও সেক্টরভিত্তিক দক্ষতা না থাকায় জনসেবা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। এজন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদায়নের দাবি জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মো. জামিলুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. আহসান হাবীব। বক্তারা ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সংবিধান সংস্কার কমিটির সাবেক সদস্য ফিরোজ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইলিয়াছ মাতাব্বর এবং ২৫ ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আহ্বায়ক কৃষিবিদ ইকবাল আহমেদ চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান ও আতিয়া সুলতানা প্রমুখ।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে কাজ করে আসছে। বিভিন্ন বৈঠক, সেমিনার ও আলোচনা সভার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান কমিশনের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।