বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় ও বৈশ্বয়িক নাগরিক সমাজের উদ্বেগ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:২০ পিএম
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় ও বৈশ্বয়িক নাগরিক সমাজের উদ্বেগ

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ও বৈশ্বয়িক নাগরিক সমাজের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক ও ইইউ পার্লামেন্টের সাবেক এমপি পাওলো কাসাকা সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, আমরা ইউরোপীয় এবং বৈশ্বয়িক নাগরিক সমাজের সদস্যরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও মানবাধিকার সুরক্ষার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। গত ২৯ আগস্ট ঢাক রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীর ওপর সংঘবদ্ধভাবে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে সংঘবদ্ধভাবে মবতন্ত্র তৈরি করে বিরোধী দল ও জনগণের ওপর হামলার মাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে; যা গণতান্ত্রিক মত প্রকাশ, নাগরিক স্বাধীনতা ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকি।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘মঞ্চ ৭১’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা ন্যক্কারজনক হামলা চালায়। সেই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন লাঞ্ছনা, অপদস্থ এবং শারীরিকভাবে আক্রমণের শিকার হন। অথচ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়। প্রকৃত মব সৃষ্টিকারী আক্রমনকারী অপরাধীদের কিছু না বলে ১৬ জন অংশগ্রহণকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

৩০ আগস্ট গ্রেফতার ব্যক্তিদের মিথ্যা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এই পদক্ষেপগুলি আইনি প্রক্রিয়ার স্পষ্ট অপব্যবহার এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এক ধরনের নিপীড়ন। এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলি অপরাধীদের সহিংসতা এবং অপরাধীদের পরিবর্তে ভুক্তভোগীদের লক্ষ্য করে, মিথ্যা অভিযোগ এবং জামিন নাকচ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) অনুচ্ছেদ ৯ লঙ্ঘন করছে। অনুচ্ছেদ ৯ আইনে নির্বিচারে গ্রেফতার এবং আটক নিষিদ্ধ করে সব ব্যক্তির স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকারকে নিশ্চিত করে। আমরা ইউরোপীয় এবং বৈশ্বয়িক নাগরিক সমাজের সদস্যরা এই ঘটনাগুলোর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

তারা বলেন, প্রতিটি নাগরিকের শঙ্কাহীন কথা বলার, সমবেত হওয়ার এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। গণতন্ত্রে গণহত্যা, হয়রানি এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষাকতার কোনও স্থান নেই। অপরাধীদের জবাবদিহির জন্য কর্তৃপক্ষকে দৃঢ়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা, ন্যায়বিচার ও তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায় জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।

এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের কাছে তারা কিছু দাবি তুলোন ধরেন। সেগুলো হলো– অবিলম্বে অন্যায়ভাবে আটক সব ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে হবে; যারা সহিংসতা সংগঠিত করেছেন এবং পরিচালনা করেছেন তাদের বিচার করতে হবে; তাদের গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতাগুলি সম্পূর্ণরূপে মেনে চলতে হবে।