রাজনৈতিক ও ভূতুড়ে সুবিধাভোগী ভাতাভোগীর ৫০ শতাংশ : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৮ পিএম
রাজনৈতিক ও ভূতুড়ে সুবিধাভোগী ভাতাভোগীর ৫০ শতাংশ : পরিকল্পনা উপদেষ্টা
ছবি : সংগৃহীত

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভাতাভোগীর ৫০ শতাংশই ভূতুড়ে বা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী। এতে যোগ্যদের অন্তভর্ভুক্ত করে উপকারভোগীর তালিকা ঠিক করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরাকরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমানে স্থানীয় সরকার নেই। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এ বিষয়টি এখন ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। ভাতাভোগীর তালিকার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় পর্যায়ে একটা রেজিস্ট্রার তৈরি করতে চায়।

আজ সোমবার চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিনদিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রোটেকশন ২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। এছাড়া অতিথি ছিলেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মনজুর হোসেন, জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিব মোখলেস-উর রহমান, মন্ত্রী পরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মিচেল ত্রেৎজা, ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পপকি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব মো. খালেদ হাসান।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা এ সময় বলেন, এখন সময় এসেছে সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এটি আমাদের থাকতে হবে। আমরা একদম গরিব দেশ না, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোনো অজুহাত চলবে না। সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে স্কুলসেবা ও স্বাস্থ্যসেবা জড়িত। এটাই মৌলিক ন্যায়বিচার। যার জীবন ধারনেরই কোনো উপায় নেই- তার স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোনো লাভ নেই।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, আমাদের যথেষ্ট শক্তিশালী রাজস্বনীতি নেই। তাই আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। এ জন্যই সরকার প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ঋণ করতে হয়।

দারিদ্র্যতা একেকজনের একেক কারণে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশে প্রত্যেকের দারিদ্র্যতার কারণ একেক রকমের। কেউ অধিক সন্তান নেওয়ার কারণে দারিদ্র্য, কারো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ। এজন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে প্রকল্প গ্রণের ক্ষেত্রে।

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অতিরিক্ত সচিব মো. খালেদ হাসান বলেন, দেশের মিসিং দারিদ্র্যসীমার সামান্য ওপরে থাকা মানুষদের নিয়ে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কয়েকটি বাজেটের প্রবণতা এবং পরিবর্তনের তুলনা করেছে, যেখানে বেশিরভাগই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সাথে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত দারিদ্র্য, বৈষম্য, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং জলবায়ু ঝুঁকির মুখে, সামাজিক সুরক্ষা মানব উন্নয়ন, স্থিতিস্থাপকতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ প্রদান করে। সরকার গত দশক ধরে এই ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট এই লক্ষ্যগুলির প্রতি অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।

বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষার মধ্যে রয়েছে সামাজিক সহায়তা, সামাজিক বীমা, শ্রমবাজার কর্মসূচি এবং একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মাধ্যমে প্রদত্ত পরিষেবা সহ বিস্তৃত উদ্যোগ। এই কর্মসূচিগুলি বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শিশু, নিম্ন আয়ের পরিবার এবং অর্থনৈতিক বা পরিবেশগত ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে। বর্তমান পদ্ধতিটি জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল দ্বারা পরিচালিত, যা সুরক্ষার একটি জীবনচক্র-ভিত্তিক মডেলের রূপরেখা তৈরি করে এবং উন্নত বিতরণ প্রক্রিয়া এবং জবাবদিহিতা ব্যবস্থার উপর জোর দেয়।

এই বছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার জন্য মোট বরাদ্দ ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। যা মোট মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।