সংস্কার কমিশনের ৩৭টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৫ আগস্ট ২০২৫, ১১:০৩ এএম
সংস্কার কমিশনের ৩৭টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০টি সংস্কার কমিশনের ৩৬৭টি সুপারিশের মধ্যে ৩৭টি সুপারিশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

এরআগে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করেন।

জানা যায়, সংবিধান সংস্কার কমিশন ব্যতীত বাকি ১০টি কমিশনের মোট ৩৬৭টি সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা জারি, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা (স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক), পর্যবেক্ষণ ও সাংবাদিক নীতিমালা (সংশোধন) এবং হলফনামার খসড়া তৈরি করা।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে নাগরিকদের পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম বাতিল করা এবং সরকারি সব দফতরে গণশুনানি নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি।

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তদন্ত-পূর্ব আবশ্যিক অনুসন্ধান-ব্যবস্থা বিলোপ, দুদক আইনের ধারা ৩২(ক) বিলোপ, উচ্চমাত্রার দুর্নীতি তদন্তে বিভিন্ন এজেন্সির সমন্বয়ে আলাদা টাস্কফোর্স গঠন এবং সিএজি ও আইএমইডির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ৮টি সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়েছে— সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ, আদালতে ‘ইনফরমেশন ডেস্ক’ স্থাপন, আদালতে নারী ও শিশুদের জন্য স্বতন্ত্র স্থান, অনলাইনে সরকারি সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, আইনজীবীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় অপর পক্ষে অন্য আইনজীবী নিয়োগে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক সার্কুলার জারি, আইনগত সহায়তা কার্যক্রমের সাথে মধ্যস্থতা কার্যক্রমকে সংযুক্তকরণ, দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি ত্বরান্বিত করার জন্য দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন এবং ফৌজদারি মামলার নিষ্পত্তি ত্বরান্বিত করার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যে সাক্ষী সুরক্ষা ও অপরাধের শিকার ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে আইনি কাঠামো তৈরি করা, পুলিশ, আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সব সেবাপ্রদানকারীকে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা।

শ্রম খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

শ্রম খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ‘যুবক’ শব্দের একটি একক সংজ্ঞা নির্ধারণ করে তাদের দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রীড়া সংস্থায় নারী প্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮ সংশোধন করা, প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক জীবন বীমা প্রচলন, যারা আত্মীয়-স্বজনের পাঠানো ভিসায় বিদেশ যান, তাদের জন্য নিজে ভিসা-প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ রাখা ও অবৈধভাবে কোনো এজেন্সির নাম ব্যবহার বন্ধ করা, অভিবাসী নারী শ্রমিকদের নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খোলা নিশ্চিত করা, প্রাক-অভিবাসন পর্যায়ে তাদের অধিকার ও সুরক্ষা সম্পর্কিত তথ্য জানানো, ভাষা ও কর্মসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা, দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, হেলথ কার্ড এবং বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা, ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা এবং একটি কেন্দ্রীভূত তথ্যভান্ডার তৈরি করা, শিল্পবিরোধ নিষ্পত্তিতে ত্রিপক্ষীয় ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠনের ব্যবস্থা, গোপনীয়ভাবে অভিযোগ দায়েরের জন্য কার্যকর অনলাইন ও অফলাইন অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গঠন করা, শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়ানো এবং উপযুক্ত এলাকায় সার্কিট কোর্ট গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, শিশুর বিকাশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করা, প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক ভেদে সব ধরনের শ্রমিক যেন শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্যসেবা পায় তা নিশ্চিত করা, কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষায় যৌক্তিকভাবে ছুটি নির্ধারণ করা, কারখানা পরিদর্শন প্রতিবেদন পরিদর্শনকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশের ব্যবস্থা করা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ চিহ্নিত করে সুরক্ষা ও ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করা, রোগব্যাধি ও দুর্ঘটনার হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রতি তিন বা ছয় মাস অন্তর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ, রাত্রিকালীন কাজের জন্য নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধান ও নিয়োগকারীর পক্ষ থেকে পরিবহন নিশ্চিত করা এবং ট্যানারি শিল্পে স্বাস্থ্য ও রাসায়নিক ঝুঁকি বিবেচনায় বিশেষ প্রশিক্ষিত শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ।