জরুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর সইয়ের বদলে লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন: আলী রীয়াজ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৩ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
জরুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর সইয়ের বদলে লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আজকের আলোচনায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত সংবিধানের বিদ্যমান ১৪১(ক) অনুচ্ছেদে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় সংযোজনের প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে।

তিনি জানান, সংশোধনের সময় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি, মহামারী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’—এই শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের ওপর সব দল একমত হয়েছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

রবিবার (১৩ জুলাই) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১২তম দিনের আলোচনায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আলী রীয়াজ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

এছাড়া জরুরি অবস্থা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা, অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও ঐকমত্য গঠিত হয়েছে বলে জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি।

অধ্যাপক রীয়াজ আরও জানান, জরুরি অবস্থাকালে সংবিধানের ৪৭(ক) অনুচ্ছেদের বিধান সাপেক্ষে কোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং বিচার ও দণ্ডসংক্রান্ত মৌলিক অধিকারসমূহ (সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত) খর্ব করা যাবে না।

তিনি উল্লেখ করেন, গত ৭ জুলাইয়ের আলোচনায় সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং জরুরি অবস্থা যেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহৃত না হয়—এই বিষয়টিতে সব রাজনৈতিক দল ও জোট একমত হয়েছিল।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে কিছু সুস্পষ্ট বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবেও ঐকমত্য পোষণ করেছে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন। তবে, কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই বিষয়টি উল্লেখ করে জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করলে, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুই বিচারপতির মধ্যে যেকোনো একজনকে নিয়োগ দিতে পারবেন—এমন বিধান সংযোজনের সুযোগ থাকবে।

তবে শর্ত থাকে, অসদাচরণ বা অযোগ্যতার অভিযোগে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের আওতায় কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকলে তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

আজকের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।