সুযোগ হারালেন টিউলিপ, জারি হতে পারে রেড অ্যালার্ট: দুদক চেয়ারম্যান

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৪ মে ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম
সুযোগ হারালেন টিউলিপ, জারি হতে পারে রেড অ্যালার্ট: দুদক চেয়ারম্যান
ছবি : সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলবে সাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট দিনে হাজির না হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

ঘুসের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার (১৪ মে) টিউলিপ সিদ্দিককে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে তলব করা হলেও তিনি আসেননি। পরে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

এক্ষেত্রে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের সহায়তায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আনার সুযোগ বিষয়ে এক্সট্রাডিশন ট্রিটি বা প্রত্যর্পণ চুক্তি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারই করে গেছে বলে জানান ড. মোমেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েকটা দেশের সঙ্গে আমাদের এক্সট্রাডিশন ট্রিটি রয়েছে, তার মধ্যে ভারত একটা। এই সুযোগ তৎকালীন সরকার (আওয়ামী লীগ) ২০১১ সালে তৈরি করে গেছে। আমাদের অপরাধী ধরে আনার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো অসুবিধা নেই।

এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, তিনি (টিউলিপ সিদ্দিক) আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারালেন। শুধু টিউলিপ নন, নিয়মানুযায়ী সবাই সে সুযোগ পাবেন। কেউ উপস্থিত না হলে পরবর্তীসময়ে আন্তর্জাতিকভাবে যে পদ্ধতি সেটা অনুসরণ করা হবে। প্রত্যেক নাগরিকের তার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যে কোনো নাগরিকই সেটা পাবেন।

এর আগে বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত ৮ মে দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে তলব করা হয়েছিল।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের অন্য অভিযুক্তদের মতো তিনিও (টিউলিপ সিদ্দিক) একজন অভিযুক্ত। আজকে তার দুদকে এসে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসেননি। তিনি নিজে এটি ফেস করবেন, আমরা আমাদের পদ্ধতিগতভাবে এগিয়ে যাবো।

তিনি বলেন, একজন মামলার আসামি অনুপস্থিত থাকলে ইনঅ্যাভসেন্স ট্রায়াল (অনুপস্থিতিতে বিচার) হয়। পরবর্তীসময়ে তিনি যদি আদালতে হাজির না হন, আমরা আন্তর্জাতিক যে পদ্ধতি রয়েছে সেটা অবলম্বন করবো।

আন্তর্জাতিক পদ্ধতির বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যদি স্বাভাবিকভাবে তাকে (টিউলিপকে) না পাই, যেহেতু তিনি বিদেশি নাগরিক কিংবা তিনি যদি পলাতক হন, সেক্ষেত্রে ইন্টারপোলের সহায়তায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হবে।

এসময় বিমানবন্দরের দুর্নীতি বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সিভিল এভিয়েশনের চারটি প্রকল্পের অনুসন্ধান আমাদের কাছে চলে আসছে। থার্ড টার্মিনাল, রাডার স্থাপন, কক্সবাজার বিমানবন্দর ও সিলেট বিমানবন্দর। প্রতিবেদনগুলো আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়টি ‘কঠিন’ জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এটি কঠিন। আগে পাচারকারীদের শনাক্ত করতে হবে। এর আগে যারা বিদেশে অবস্থান করেন কিংবা বিদেশে নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তাদের বিষয়ে আমাদর কমিশন থেকে সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের সন্তান-সন্ততি যারা ওখানে (বিদেশে) থাকছেন, অধিকাংশই কিন্তু বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে চলে যাচ্ছেন।

‘আমরা যদি ৫ আগস্টকে একটি বেঞ্চমার্ক ধরি, তখন দেখা যাবে- যারা দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন, তাদের যেসব সম্পদ গুলশান-বনানীসহ বিভিন্ন জায়গায় আছে, তারা তাদের প্রোপার্টি বিক্রি করছেন কি না? করলে সেই টাকা কোথায় যাচ্ছে? এই সংবাদ আপনারাই দেবেন’- সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন ড. মোমেন।

বিদেশে মন্ত্রী-এমপিদের সন্তানদের আয়েশী জীবনযাপন বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সক্ষমতা আপনাদের বুঝতে হবে! তারা সেখানে কীভাবে আছে সেটা আপনারাই আমাদের জানাচ্ছেন। তখন আমাদেরও সন্দেহ হচ্ছে তারা এত টাকা পাচার করেছে যে, তাদের সন্তানরা আয়েশী জীবনযাপন করছে। এমনও হতে পারে ফাঁকফোকর গলিয়ে টাকা এখনো পাচার হচ্ছে। এসব নিয়ে আমাদের আরও কাজ করতে হবে।