গত অর্থবছরে শাহজালাল বিমানবন্দর আয় ৩ হাজার কোটি টাকা: বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৪ মে ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
গত অর্থবছরে শাহজালাল বিমানবন্দর আয় ৩ হাজার কোটি টাকা: বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক
ছবি : সংগৃহীত

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলছেন, গেলো অর্থ বছরে বিমান বন্দরটি আয় করেছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। বছরে ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা থাকা এই বিমানবন্দর দিয়ে গত বছর যাতয়াত করেছেন এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী সংখ্যা ও সেবার মান আরও বাড়বে।

বুধবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল। বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলামকে বিদায় সংবর্ধনা ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগীব সামাদকে স্বাগত জানাতে বুধবার (১৪ মে) অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন 'এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশ (এটিজেএফবি)' ।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলামকে ২০২২ সালের ২২ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে শাহজালাল বিমান বন্দরের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ করে সরকার। তার সময়ে বিমান বন্দরের সেবার মান উন্নয়নের বিষয়টি যাত্রী মহলে প্রশংসা পেয়েছে। ২০২৪ সালের সরকারপরিবর্তনের আগের ও পরের অস্থির সময়েও শক্ত হাতে বিমানবন্দর চালু রাখতে নেতৃত্ব দেন কামরুল ইসলাম। তিন বছর দুই মাসের মাথায় সরকারি সিদ্ধান্তে তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে নিজ বাহিনীতে।

কামরুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ। গত ৭ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে তার নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়।

এই সপ্তাহ বিমান বন্দরে কাটিয়েই নিজ বাহিনীতে ফিরবেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল। এর আগে বুধবার এটিজেএফবি বিদায়ী নির্বাহী পরিচালককে সংবর্ধনা ও নতুন নির্বাহী পরিচালককে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানোর আয়োজন করে। সেখানে দুই নির্বাহী পরিচালক কথা বলেন, নিজেদের চ্যালেঞ্জ ও পরিকল্পনাগুলো নিয়ে।  

অনুষ্ঠানে বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম শাহজালাল বিমান বন্দরে তার বিভিন্ন সময়ের অভিজ্ঞতা ও উতরে আসা চ্যালেঞ্জগুলো তুরে ধরেন।

কামরুল ইসলাম বলেন, “শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বছরে ৮০ লাখ যাত্রীসেবার সক্ষমতা রয়েছে। তারপরও গেলো বছর এই বিমানবন্দর দিয়ে রেকর্ড ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ফলে গেলো (২০২৩-২০২৪) অর্থবছরে আয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। যা এর আগের (২০২২-২০২৩) অর্থবছরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।

শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সক্ষমতা বেড়েছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, “আমি আমার মেয়াদে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়েছিলাম। ফলস্বরূপ, ৮৫ শতাংশেরও বেশি লাগেজ এখন স্ট্যান্ডার্ড সময়ের মধ্যে (১ ঘন্টা) যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, যা স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যাত্রীসেবা বাড়াতে যে হটলাইন চালু করা হয়েছিল তাতে এখন যাত্রীদের ছোটখাট অভিযোগ আর প্রশ্নগুলোর নব্বই শতাংশর নিস্পত্তিই টেলিফোনে করা সম্ভব হচ্ছে।”


তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জেট ফুয়েলের দাম কমিয়েছে সরকার। যা ফ্লাইটের ভাড়া কমাতে সাহায্য করবে এবং অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহনের বাজারকে চাঙ্গা করবে। আর বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপিতে বিমান পরিবহন খাতের অবদান ৫-৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা বর্তমানে ১ শতাংশেরও কম।

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ২০২৪ সালে এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী চলাচল প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, “এর মূল কারণ হিসেবে অভিবাসী কর্মীদের চলাচল। অভিবাসী কর্মীরা যেন নিজ দেশের বিমানবন্দরে যথাযোগ্য সম্মান ও সেবা পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। এখনো সেই চেষ্টা চলছে।”
চলতি বছরের ডিসেম্বরে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী সেবার মান ও যাত্রী সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন কামরুল ইসলাম। বিমান পরিবহন খাত সম্পর্কে গঠনমূলক প্রতিবেদনের জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

শাহজালাল বিমান বন্দরের নবনিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রাগীব সামাদ বিমানবন্দরে স্বচ্ছতা এবং পেশাদারিত্বের সাথে যাত্রীসেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “একটি বিমানবন্দর হল একটি দেশের প্রতিচ্ছবি। ফলে বিমানবন্দর দেখেই একটি দেশ সম্পর্কে ধারণা পান বিদেশীরা। তাই শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে অপারেশন শুরু করার চ্যালেঞ্জ নিতে চাই।”

অনুষ্ঠানে এটিজেএফবি সভাপতি তানজিম আনোয়ার বলেন, “এই যুগে তথ্য আগলে রাখার প্রবণতা গুজব ছড়াতে আরও সহায়কত ভূমিকা পালন করে। গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম এখানকার ঘটনাগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের নিয়মিত অবগত করেছেন। কর্মরত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছেন। খুবই বিশেষায়িত এই খাতের বিভিন্ন বিষয় এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে সাংবাদিকদের ধারণা দিতে এটিজেএফবির সদস্যদের নিয়ে কর্মশালারও আয়োজন করা হয় তার সময়ে। বিমান বন্দরের মতো অতি সংবেদনশীল স্থাপনার যথাযথ ব্যবহার ও যাত্রীসেবা নিশ্চিতের জন্য খুঁটিনাটি বিষয়গুলো গণমাধ্যমের মাধ্যমে মানুষকে জানানোর অব্যাহত চেষ্টা করে গেছেন তিনি।”

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এটিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক বাতেন বিপ্লব।