এনবিআর ভাগের প্রতিবাদে কর্মীদের ৩ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৩ মে ২০২৫, ১০:২৭ পিএম
এনবিআর ভাগের প্রতিবাদে কর্মীদের ৩ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভেঙে দুটি বিভাগে বিভক্ত করার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার থেকে তিন দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে সংস্থাটির কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর ঐক্য পরিষদ’।

মঙ্গলবার (১৩ মে) এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এক অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এনবিআর সংস্কার কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে এনবিআরকে বিভক্ত করার সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু বলেন, আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা এবং শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

যুগ্ম কমিশনার মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতা এবং ফজলে এলাহীও সমাবেশে বক্তব্য দেন। আজ বিকাল ৪টা থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

বিক্ষোভ চলার সময় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান অন্যত্র একটি সভায় যোগদানের জন্য প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

এনবিআর ইউনিটি কাউন্সিল অধ্যাদেশটি বাতিল চায়। কারণ, এনবিআর উপদেষ্টা সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। ইউনিটির সঙ্গে কমিটির আলোচনাও অধ্যাদেশে প্রতিফলিত হয়নি।

তারা আরও অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।

আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিষেবা, বাজেট কার্যক্রম এবং রপ্তানি কার্যক্রম কর্মবিরতি কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়।

গত কয়েক সপ্তাহে এনবিআর কর্মকর্তারা নতুন আইনের অধীনে প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগের অনুমতি দেওয়ার বিধান বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। এনবিআরকে দুটি সত্তা - রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যা নিয়েই মূলত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

সরকার গত বছরের ৯ অক্টোবর এনবিআর সংস্কার কমিটি গঠন করে। কমিটিতে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, নাসিরউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও আমিনুর রহমান রয়েছেন।

অধ্যাদেশটি গতকাল (সোমবার) মধ্যরাতে প্রকাশ করা হয়।

নতুন আইনে সরকার নবগঠিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব হিসেবে উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যেকোনো সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ করতে পারবে।

এছাড়া কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল ও আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনাল এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব নীতি বিভাগের অধীনে থাকবে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি এনবিআরকে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিভক্ত করার জন্য খসড়া আইনে অনুমোদন দিয়েছেন।

নতুন আইনে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভিন্ন পদ আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ ও আইনি কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদায়ন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

আইন অনুসারে, সরকারের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রম ও রাজস্ব আদায় ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পৃথক করা প্রয়োজন।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজস্ব আদায় কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান কাঠামো পুনর্গঠন করে একটি রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং একটি রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি ও প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত আইনে আরও বলা হয়ছে, ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক বিভাগের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডার ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মরতদের দিয়ে।’

যেহেতু সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে ও রাষ্ট্রপতির কাছে মনে হচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন, তাই রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশ জারি করবেন, যা রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ নামে পরিচিত হবে।

এই অধ্যাদেশ জারির পর সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাজস্ব নীতি বিভাগ নামে একটি নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করবে, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে।