কারও স্বার্থে ব্যবহৃত হবেন না: পুলিশকে ড. ইউনূস

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম
কারও স্বার্থে ব্যবহৃত হবেন না: পুলিশকে ড. ইউনূস

আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাতে কারও স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্‌সে পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়, সে জন্য পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতি সমান আচরণ, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা আপনাদের ও আমাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব।’

 

‘কোনো ব্যক্তি যদি অন্যায় বা অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচিত হন, সেই ব্যক্তির মাধ্যমে ন্যায়প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। সুতরাং যাতে কারো মাধ্যমে ব্যবহৃত না হন। সত্য ও ন্যায়প্রতিষ্ঠার ব্রত হিসেবে নির্বাচনে নিজেদের নিয়োজিত করবেন। পুলিশ সদস্য হিসেবে, তার চেয়েও বড় বিষয় এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘ভবিষ্যতে কখনো যাতে পুলিশকে দলীয় বাহিনী বা অন্যায় কাজে ব্যবহার করা না যায়, সে জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনের আগের সময়টা অনেক কঠিন। আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, পরাজিত শক্তি যাতে কোনোভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে। আমরা একটি যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি।

‘আমরা জানা ছিল না যে, দৈনন্দিনভাবে যে কঠিন অবস্থায় আপনাদেরকে জীবন যাপন করতে হয়, সেটার মাত্রা কত গভীর। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আশা করি, তা বাস্তবায়ন হয়েছে। কতদূর হয়েছে, তা আবার খোঁজ নেব,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রধান ফল হচ্ছে, আপনাদের বিষয়গুলো আবার আমার কাছে উঠেছে। এটা নিয়ে আবার বসবো, যাতে আপনাদের জন্য একটা সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করা যায়, যাতে কাজ করতে আপনাদের মধ্যে উৎসাহ আসে। পরিস্থিতি আপনাদের জন্য সহায়ক হয়।’

স্বৈরাচারী শাসনামলের ১৫ বছরে দেশের পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করায় সমস্ত ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন,  ‘স্বৈরাচারের অবৈধ ও অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী ব্যাপকভাবে জনরোষের মুখে পড়েছিল। অনেক সৎ পুলিশ সদস্যকেও এজন্য মাশুল দিতে হয়েছে।’

‘গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল, পুলিশের সাথে জনগণের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সরকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগ নিরসনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা, অংশীজনদের সঙ্গে পুলিশের আন্তঃযোগাযোগ জোরদার করা, পুলিশ সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ জন্য পুলিশসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

‘নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীকে শক্তিশালী ভূমিকায় দেখতে চায় মানুষ। আপনাদের প্রতি আহ্বান, নারী-শিশুর নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সংবেদনশীল হয়ে কাজ করবেন। সব শ্রেণি-পেশার নারীরা যেন যেকোনো ঘটনায় পুলিশের হটলাইনে ফোন করে সর্বোচ্চ সহায়তা পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

নারী-শিশু নিরাপত্তা পেলে আমরা বুঝতে পারবো নিরাপত্তার দিক থেকে দেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

‘বিগত ১৬ বছরে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেটা কমিয়ে আনা ও পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এটা কঠিন না। একবার সেই আন্তরিক পরিবেশ তৈরি হলে এ বন্ধন অটুট থাকবে। আমাদের সমাজ যে সুশৃঙ্খলা সেটা প্রমাণিত হবে,’ বলেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘মাঠপর্যায় থেকে সব ক্ষেত্রে জনগণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে হবে। এ কাজটা পুলিশকে করতে হবে। সরকারের দিক থেকে যা যা প্রয়োজন, তা বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেই দায়িত্বগ্রহণ করছি।’