ইন্টারনেট বন্ধ করার সকল কলাকানুন বন্ধ করে দেওয়া হবে: ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব


ইন্টারনেট বন্ধ করার সকল কলাকানুন বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি অডিটরিয়ামে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ-টিআরএনবি আয়োজিত ‘ইন্টারনেট সেবা: সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ করার কলাকানুন বন্ধ করে দেব। অতীতে দেখেছেন ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় ফ্রিল্যান্সাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিনিয়োগে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের বিশ্বকে দেখানোর দরকার আছে যে ইন্টারনেট আর বন্ধ হবে না- এটা বিনিয়োগকারীদের দেখানোর বাধ্যবাধকতা আছে সেটা আমাদের দেখাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ইন্টারনেটের কোয়ালিটি বিবেচনায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় দাম সবচেয়ে বেশি। এখনো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগের জন্য আলাদা ইন্টারনেট ব্যবস্থা নেই। তাই বৈশ্বিক মানে নিজেকে বিবেচনা করতে পারি না। এজন্য আমাদের প্রথম উদ্যোগ টপোলজি পরিবর্তন। আমরা অনেকগুলো লাইসেন্স তুলে ফেলবো। লাইসেন্স লিমিটেড থাকবে না, লাইসেন্সের শর্ত পূরণের জন্য সময় দেওয়া হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে তা পূরণে ব্যর্থ হলে জরিমানা করা হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, আমরা সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, আইনে ইন্টারনেট বন্ধের কোনো ক্লজ যেন না থাকে।
ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক জানান, ইন্টারনেটের দাম নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্নতায় বিরক্তি প্রকাশ করেন গ্রাহকরা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে বাধ্য হয়েই ৫০০ টাকায় দেশজুড়ে ইন্টারনেট দেয় আইএসপিরা। তবে এই সীমা ৫ এমবিপিএস থেকে দ্বিগুণ করে ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট সেবা দেবে তারা। অচিরেই গতি ২০ এমবিপিএস হবে।
এজন্য আ্যাক্টিভ শেয়ারিং চালু, লাইসেন্স মেয়াদ ১০ বছর করা; আইআইজি; এনটিটিএন ক্যাপাসিটি এবং সরকারি অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ এবং ৫ বছরের জন্য লভ্যাংশ শেয়ার থেকে বাইরে রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়।
দাম কমাতে নিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে টেলিকম বিশেষ সহকারী বলেন, একই দামে ১০ এমবিপিএস দিচ্ছেন, ২০ এমপিপিএস দিতে পারবেন। এটা আপনাদেরকেই মনিটর করতে হবে।
তিনি বলেন, ইগভর্নেন্স; ইন্টারনেট অ্যফোর্ডেবিলিটিতে বিশ্বে আমরা পিছিয়ে আছি। এজন্য তিনটি লেয়ারে বিন্যস্ত হবে আগামী দিনের নেটওয়ার্ক টপলোজি। বৈশ্বিক মানে এগিয়ে যেতে এই সিদ্ধান্তে লাইসেন্সের সীমা সংখ্যায় না বেধে কেপিআই নির্ধারণ করে দেবে। আগামী জুন থেকে শুরু হবে ডিরেগুলেশন। ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক প্রভাব ছেঁটে ফেলা হবে। এ জন্য ডিজিটাল সেবা বাড়াতে হবে। আইওটিতে নজর দিতে হবে। এই সেবার পথে বাঁধা গুড়িয়ে দেয়া হবে। ব্যবসায় অ্যাক্টিভ শেয়ারের সুযোগ উন্মোচন করা হবে। এক্ষেত্রে তিন বছরের মধ্যে মেট্রোতে মাটির নিচে শতভাগ টেলিকম ফাইবার স্থাপন করতে হবে।
তিনি বলেছেন, আগামী দুই বছরে বৈশ্বিক সব সূচকে ৩০ এর মধ্যে আনা হবে। এই কাজে নীতি হাল নাগাদে যারা টাকর বস্তা নিয়ে প্রভাবিত করবে তারা নিজেদেরই ধ্বংস ডেকে নেবে।
ডিডব্লিউডিএম- নিয়ে তিনি বলেন, আমরা পিছনের দিকে হাটছি না। আমরা বার্তা দিতে চাই, আপনারা যারা ব্যবসায়ী তারা ব্যবসা করেন। আপনারা রাজনৈতিক বা ইনফ্লয়েন্সারদের কাছে যাবেন না। আমরা চাই ভয়েস ওভার ওয়াইফাই দ্রুত আসুক। আউট ডোরের উপর থেকে ইনডোরে নিয়ে আসি। যাতে কোয়ালিটিটা নিশ্চিত করতে পারি। একই সাথে টেলকো গ্রেডর ফাইবার নেই। ওভার হেডেড ফাইবারকে টেলকো গেডের বলা যায় না। শতভাগ ফাইবার আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকবে।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমীন দেওয়ান। টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দে’র সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী। আলোচনায় অংশ নিয়েছেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার, সেক্রেটারি জেনারেল এবং আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঞা, ইন্টারনেট সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোম চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী। টেলিটক বাংলাদেশের এটিএম সাইফুর রহমান খান, রবি’র কোম্পানি সেক্রেটারি ও চীফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম ও বাংলালিংক এর চীফ কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার তাইমুর রহমান বক্তব্য রাখেন।