বর্ণাঢ্য আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫১ পিএম
বর্ণাঢ্য আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির

দেশের সকল সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বা পহেলা বৈশাখ বণার্ঢ্য আয়োজনে বিপুল জনসম্পৃক্ততায়  উদযাপন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকার চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তায় ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহেযোগিতায় পহেলা বৈশাখে অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে নগরবাসীর জন্য আয়োজন করা হয় ‘ড্রোন শো’ ও ‘কনসার্ট’।

সোমবার (১৪ এপ্রিল ) বিকাল ৩টায় মানিক মিয়া এভিনিউতে কনসার্ট আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনসহ বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ প্রতিনিধিরা।

অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সচিব মো. মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বিকালের কনসার্ট—

নববর্ষ কনসার্টে শুরুতেই পারফরম্যান্স করে বেসিক গিটার লার্নিং স্কুল, বান্দরবান। এরপর আর এন আর সংগীত পরিবেশন করে। সমবেত সংগীত ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি সকল শিল্পীরা পরিবেশন করেন। দুটি একক সংগীত পরিবেশন করেন মিঠুন চক্র এবং ‘দেওরা’সহ আরও একটি ঐতিহ্যবাহী পালা পরিবেশন করেন ইসলামউদ্দিন পালাকার। তারপর গারো জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ড এফ মাইনর সংগীত পরিবেশন করেন। ‘চলো নীরালায়’সহ ৩টি একক সংগীত পরিবেশন করেন আতিয়া আনিশা। দ্বৈত ও ২টি একক সংগীত পরিবেশন করেন রাকিব ও সাগর দেওয়ান এবং ২টি দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করেন রাকিব ও আরজ আলী ওস্তাদ।  ‘মাঝে মাঝে তুমি এলে’, ‘মানুষ কেন এরকম’ ও ‘গল্প না’ গান ৩টি পরিবেশন করেন আহমেদ হাসান সানি ও জুলাই আন্দোলনের গানসহ ৩টি গান পরিবেশন করেন পারশা। এরপর ‘ব্যান্ড সংগীত’ পরিবেশন করে অ্যাশেজ ব্যান্ড।

ড্রোন শো—

সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ, জনপ্রিয় ‘ড্রোন শো’। চীন সরকার ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এই ‘ড্রোন শো’ আয়োজন করা হয়। এই ‘ড্রোন শো’ চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেমন একটি মাইলফলক, তেমনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালায় আয়োজিত তারুণ্যের উৎসবের সমাপনী ও পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবেও এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এতে সর্বমোট ২ হাজার ৬০০ ড্রোন ব্যবহার করে ১২টি মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়।

এই শো’র শুরু মোটিফ জুলাই-অভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ সাজানো হয়েছে। ১৪ মিনিটের প্রদর্শনীটি উপজীব্য হলো মুক্তির আনন্দ, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের অকুতোভয় আত্মাহুতি, নারী জাগরণ, দেশীয় সংস্কৃতি ও জনগণের সংহতি এবং চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী। এতে একটি ছবিতে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে প্যালেস্টাইনের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতিও জানানো হয়েছে। ‘ড্রোন শো’ পরিচালনায় ৬ জন সদস্যের চীনা বিশেষজ্ঞ দল গত ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু করে। ‘ড্রোন শো’ পরিচালনা করেন ১৩ জন চীনা পাইলট বা ড্রোন চালনাকারী বিশেষজ্ঞ।

সকালে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় অংশগ্রহণ—

এরআগে নববর্ষ উপলক্ষে সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্যে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো ২৮টি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করে।

ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে আরও বড় পরিসরে লোক ঐতিহ্য এবং ২৪’র চেতনাকে ধারণ করে এ বছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখোয়া, বম, ম্রো, রাখাইন, খুমি, বানাই, সাঁওতাল, ওঁরাও, তুরী, মাহালি, মালপাহাড়িয়া, কোল, মাহাতো, মুণ্ডা রাজোয়াড়, মনিপুরী, খাসিয়া, চা-জনগোষ্ঠী, গারো, হাজং, কোচ ও মালো। এ ছাড়াও শোভাযাত্রায় দুই শতাধিক ব্যান্ড মিউজিশিয়ান অংশগ্রহণ করেন এবং পৃথিবীর শান্তি কামনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সম্মিলিতভাবে গান পরিবেশিত হয়।