জিমে নতুন? জেনে নিন, মেদ ঝরাতে কোন মেশিনগুলো কার্যকর


আমরা যারা অফিস করি বা যাদের শারীরিক কর্মকাণ্ড বেশ কম, তাদের জিমে যাওয়া জরুরি। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়া, তা বার্ন করতে না পারা, কম হাঁটা—এসব কারণে শরীরে মেদ জমে যায়। এই বাড়তি ওজনের কারণে হাঁটু ও গোড়ালিতে পানি জমতে শুরু করা ও ব্যথা হওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এসব থেকে রক্ষা পেতে জিমে ভর্তি হওয়া খুব ভালো সিদ্ধান্ত।
কিন্তু শুধু জিমে গেলেই চলবে না; সেখানে অনেক ধরনের যন্ত্রপাতি থাকে ব্যায়াম করার জন্য। যারা কেবল শুরু করছেন, সব যন্ত্রপাতি তাঁদের জন্য নয়। কোন যন্ত্রগুলো আপনার উপযোগী হবে, তা জানতে জিমের ট্রেইনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তবে জেনে রাখতে পারেন, জিমের কোন মেশিনগুলো মেদ কমাতে সহায়তা করে। জানা থাকলে আপনি দ্রুত ট্রেনারের কথা বুঝতে পারবেন। তাতে অল্প সময়ে খানিক হলেও বেশি সুবিধা পাবেন।
শরীরের দৃশ্যমান মেদ ঝরিয়ে ফেলা যদি আপনার প্রাথমিক লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে সেসব মেশিন আপনার বেছে নিতে হবে, যেগুলো পেশি টোন করতে ও চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখলে অল্প দিনের মধ্য়ে শরীরের দৃষ্টিকটু মেদ ঝরানো সম্ভব হয়। ফলে পরের ধাপে বডি স্ক্যাল্পটিংয়ের কাজ শুরু করতে পারবেন। জেনে নিন প্রাথমিকভাবে মেদ ঝরাতে জিমের কোন মেশিনগুলো ব্যবহার করে উপকার পাবেন–
ট্রেডমিল
পেটের মেদ কমানোর জন্য ট্রেডমিল হচ্ছে অন্যতম সেরা জিম মেশিন। এটি এককথায় সহজ ব্যায়াম ও নিয়মিত ব্যবহারে ওজন কমানোর নিশ্চয়তা দেয়। ট্রেডমিলে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা, পাওয়ার ওয়াক অথবা দৌড়াতে পারেন। শুরুর দিকে ৩ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮ পর্যন্ত গতি তুলে আপনি ট্রেডমিলে হাঁটতে বা দৌড়াতে পারেন। এরপর ধীরে ধীরে গতি আরও বাড়াতে পারেন। ট্রেডমিলে হাঁটার অনেক সুবিধা রয়েছে। এটি হৃদ্স্বাস্থ্য়ের উন্নতি ঘটায়। ট্রেডমিলে হাঁটা মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কমাতে এবং মনমেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে ও শরীর টোন করতে কার্যকর। কিন্তু আপনি কত ক্যালরি পোড়াতে পারবেন? ট্রেডমিলে ৫ গতিতে এক ঘণ্টা হাঁটলে ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালরি পোড়ে। এভাবে ১০ দিন করলে ১ পাউন্ড বা আধা কেজি কমানো সম্ভব।
এলিপটিক্যাল ট্রেইনার
নতুন জিমে যাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা শুরুর দিকে এই জিম মেশিন ব্যবহার করুন। এটি ব্যায়াম করার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাতের ঝুঁকি কমায়। তা ছাড়া ওজন কমাতে, স্ট্যামিনা বাড়াতে ও সামগ্রিক কার্ডিও ফিটনেস উন্নত করতে সহায়ক। মেশিনটি ব্যবহার করলে পুরো শরীরের ব্যায়াম হয়ে যায়। এলিপটিক্যাল ট্রেইনার উচ্চ গতিতে ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে এবং হৃৎস্পন্দন বাড়ায়, যা ওজন কমাতে ও হৃদ্যন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। ৩০ মিনিট এই মেশিন ব্যবহারে পোড়ে ১৫৪ থেকে ১৮০ ক্যালরি।
স্পিন বাইক
অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টে ব্যথা বা আঘাত থাকলে দৌড়ানো কিংবা লাফঝাঁপ করার মতো ব্যায়ামগুলো ক্ষতিকর হতে পারে। সেদিক থেকে স্পিন বাইক ব্যবহারে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা তেমন একটা নেই বললে চলে। এটি মেদ ঝরাতে ভালো কাজ করে। প্রতিদিন ৪৫ মিনিট স্পিন বাইক ব্যবহারে কমানো সম্ভব ৫০০ থেকে ৭০০ ক্যালরি। নিয়মিত স্পিন বাইক ওয়ার্কআউট আপনার পেশিকে টোন ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি চালালে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে, যা মন ফুরফুরে রাখতে সহায়ক।
কেন আপনার ফিটনেস ব্যায়াম হিসেবে স্পিন বাইক বেছে নেবেন? প্রথমত, এটি চালানো খুব কঠিন নয়। অর্থাৎ ব্যায়াম করার জন্য এটি বেশ আরামদায়ক যন্ত্র। এটি আপনার জয়েন্টে মৃদু চাপ দেবে। ফলে ব্যথা থাকলেও তেমন কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। দ্বিতীয়ত, এটি অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর ক্যালরি পোড়ায় বলে ওজন কমানো এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি করার একটি কার্যকর উপায়। অবশেষে এটি একটি মজাদার ও চ্যালেঞ্জিং ওয়ার্কআউট, যা আপনাকে আপনার সহ্যের সীমা অতিক্রম করতে এবং আপনার ফিটনেস লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
সতর্কতা
আগেই বলা হয়েছে, জিমে আপনার ট্রেইনারের সঙ্গে পরামর্শ করুন, জিম শুরু করার সময় কোন ধরনের মেশিন ব্যবহার করতে হবে। নইলে শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সেই সঙ্গে ট্রেইনারের দেওয়া খাবার ও বিশ্রামবিষয়ক পরামর্শগুলো পালন করুন। তাতে ফল পাবেন দ্রুত।
সূত্র: ওয়েল টেক