কেন বাড়ছে কিশোর-কিশোরীদের হৃদরোগের ঝুঁকি ?


হৃদরোগে শুধু বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন না, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও হৃদরোগের ঝুঁকি আগের চেয়ে বেড়েছে। বর্তমানে অনেকে ক্লাস করতে করতে বা খেলাধুলা করতে করতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। অবাক লাগলেও সত্যি, অনেক কম বয়সেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কেন কিশোর-কিশোরীরা হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে-
১. চিকিৎসকদের মতে, জীবনধারা, পরিবেশ এবং জেনেটিক গঠন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। হৃদরোগ জিনগতভাবে হতে পারে। অর্থাৎ মা–বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব ইতিহাস থাকলে কিশোর -কিশোরীদেরও হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
২. অতিরিক্ত শারীরিক ওজন ও স্থূলতা নানান রকম স্বাস্থ্যগত জটিলতা তৈরি করে, যা এক পর্যায়ে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া খাবারে অনিয়ম, ঠিকমতো না ঘুমানো, টানা পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, হতাশা, মাদকাসক্তি ইত্যাদি কারণে কিশোর-কিশোরীদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
৩. শরীরে কোলেস্টেরল জমে ধমনী সরু ও শক্ত হয়ে যেতে পারে। যে রোগকে এথেরোস্ক্লেরোসিস বলা হয়। যা শৈশব থেকেই শুরু হতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
৪. কিশোর-কিশোরী রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটানা রিল দেখা বা ভিডিও গেম খেলার অভ্যাসের কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে। স্ক্রিনের দিকে একটানা চোখ রাখার ফলে মানসিক উদ্দীপনা তৈরি হয়। ফলে হৃদস্পন্দন ও অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা বেড়ে শরীরে স্ট্রেসের মাত্রা বেড়ে যায়। এ থেকে দেখা দিতে পারে হার্টের রোগ।
যা করবেন
১. হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটি সুষম ও স্বাস্থ্যকর ডায়েট রাখা জরুরি। তাই নিয়মিত শাকসবজি, ফল, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে।
২. অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ, বিশেষ করে চিনিযুক্ত পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এসব খাবারে প্রচুর ফ্যাট, সোডিয়াম ও শর্করা থাকে। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
৪. টেলিভিশন, ভিডিও গেম এবং অন্যান্য ডিভাইসের জন্য স্ক্রিন টাইমার দিতে হবে। এছাড়া মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
৫. আজকাল কিশোর-কিশোরীরা অনলাইন থেকে ফ্যাট ডায়েট অনুসরণ করেন। এটি করা যাবে না। ভবিষ্যতে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
৬. শরীরচর্চামূলক ক্রিয়াকলাপে যুক্ত থাকতে হবে। হাঁটা, ব্যাডমিন্টন খেলা, সাঁতার কাটা, যোগব্যায়াম করা, বাস্কেটবল খেলা এছাড়া বাড়িতে বাগান করার মতো শখের কোনো কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এসব কাজ শরীরকে গতিশীল রাখবে।
৭. প্রতিবছর পুরো দেহের চেকআপ করাতে হবে। ছয় মাস পরপর সম্ভব না হলেও বছরে অন্তত একবার পুরো দেহের পরীক্ষা করাতে হবে।
সূত্র: দ্য টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউট, মায়ো ক্লিনিক, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন