মানুষের শরীরের জন্য কোনটি বেশি দরকার, মাছ নাকি মাংস


বাংলাদেশের খাদ্যাভ্যাসে মাছ আর মাংস – দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের খাবার টেবিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎসবের মেন্যুতে সমানতালে থাকে মাছ-মাংসের নানান পদ। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, শরীরের জন্য কোনটি বেশি দরকার?
পুষ্টিবিদরা বলছেন, মাছ ও মাংস দুটোতেই প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও অন্যন্য উপাদান আছে, কিন্তু তাদের উপকারিতা ও ঝুঁকি আলাদা। তাই বিশেষজ্ঞরা সাধারণত একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে খাওয়ার পরামর্শ দেন না; বরং পরিমাণ, মান ও রান্নার ধরণে সচেতন থাকা জরুরি। সেই সঙ্গে বিশেষ বিশেষ শারীরিক পরিস্থিতির জন্য একেকটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মাছের উপকারিতা
মাছকে বলা হয় ‘বাংলার সোনার খনি।’ এতে থাকে উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-টুয়েলভ, আয়োডিন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা-৩ আমাদের মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও চোখের সুস্থতায় কাজ করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত দুইবার মাছ খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। বিশেষ করে সামুদ্রিক চর্বিযুক্ত মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন বা টুনায় প্রচুর ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে রুই, কাতলা, মাগুর বা টেংরাতেও উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রোটিন থাকে।
মাংসের উপকারিতা
মাংস হলো শরীরের জন্য অন্যতম প্রোটিনের উৎস। এতে থাকে আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি-টুয়েলভ, যা শরীরের কোষ গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়তা করে।
গরু, খাসির লাল মাংস বা রেড মিটে বেশি পরিমাণ আয়রন থাকে, যা বিশেষ করে অ্যানিমিয়া রোধে কার্যকর। আবার মুরগি ও হাঁসের মতো সাদা মাংসে প্রোটিন থাকলেও তাতে ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম।
ঝুঁকি ও সচেতনতা
অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়ার সঙ্গে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে মাছেও ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে নদী বা সমুদ্র দূষিত হলে এতে পারদ বা মার্কারি জমা হতে পারে, যা বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে স্নায়ু ও কিডনির ক্ষতি করে। এছাড়া অনেকেই বাজারে ভেজাল মাংস বা মাছের সমস্যার মুখোমুখি হন। তাই সঠিক উৎস থেকে কেনা এবং সঠিকভাবে রান্না করাই নিরাপদ।
কোনটা বেশি দরকার?
আসলে মানুষের শরীরের জন্য মাছ এবং মাংস দুটোই দরকার। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন—
>> সপ্তাহের খাদ্যতালিকায় অন্তত ২–৩ দিন মাছ রাখা উচিত।
>> লাল মাংস সপ্তাহে ১–২ দিন খাওয়া যেতে পারে, তবে চর্বি কমিয়ে ও সীমিত পরিমাণে।
>> মুরগি বা হাঁসের মতো সাদা মাংস তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর।
>> প্রাণিজ আমিষের সঙ্গে প্রচুর শাকসবজি, ফল ও ডালও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরি।
অর্থাৎ শরীরের জন্য কোনো একক খাবার নয়, বরং সুষম খাদ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ, যুক্তরাষ্ট্র