কম বয়সেই ব্যক্তিগত সঞ্চয় শুরু করার সহজ উপায়

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৪ জুলাই ২০২৫, ১১:১৯ এএম
কম বয়সেই ব্যক্তিগত সঞ্চয় শুরু করার সহজ উপায়
ছবি : সংগৃহীত

বেতন হাতে আসলেই খরচ শুরু, মাস শেষ হতে না হতেই পকেট ফাঁকা – এটা যেন আমাদের অধিকাংশ তরুণ-তরুণীরই বাস্তবতা।

কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে আজ থেকেই যদি একটু একটু করে সঞ্চয় শুরু করা যায়, তবে হঠাৎ কোনো আর্থিক ঝড়ে নিশ্চিন্তে থাকা সম্ভব। তাই উপার্জন করতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। চলুন জেনে নিই কীভাবে সহজ কিছু কৌশলে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা যায়

১. নিজের খরচের উপর নজর দিন

সঞ্চয়ের প্রথম ধাপ হচ্ছে আয় বুঝে ব্যয় করা। মাস শেষে ‘টাকাগুলো কোথায় যেন চলে গেল’ – এমন অনুভূতি থেকে বাঁচতে আপনার সব খরচ একটি খাতায় লিখুন বা মোবাইল অ্যাপে ট্র্যাক করুন। খাবার, ভাড়া, যাতায়াত, বিল, বিনোদন – সব খরচ লিখে রাখলে খরচের অপ্রয়োজনীয় জায়গাগুলো সহজেই ধরতে পারবেন।

২. ৫০-৩০-২০ নিয়ম মানুন

এই নিয়ম অনুযায়ী আপনার আয়কে তিনটি অংশে ভাগ করুন। ৫০ শতাংশ জরুরি খরচ, যেমন- ভাড়া, খাবার, বিদ্যুৎ বিল; ৩০ শতাংশ আপনার পছন্দমতো খরচ, যেমন- ঘুরতে যাওয়া, অনলাইন শপিং, বাইরে ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি; আর ২০ শতাংশ সঞ্চয়ের জন্য বরাদ্দ রাখুন। এটা একটা বাস্তবধর্মী নিয়ম, যা আপনাকে একসঙ্গে খরচ এবং সঞ্চয়ের ভারসাম্য শেখাবে।

৩. স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা সঞ্চয়ে রাখুন

বেশিরভাগ ব্যাংকেই এখন ‘অটো সেভিংস’ ফিচার আছে, যেখানে আপনি ঠিক করে রাখতে পারেন প্রতি মাসে বেতনের একটা অংশ যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার সঞ্চয় হিসাব বা ফিক্সড ডিপোজিটে চলে যায়। টাকা হাতে এলে খরচ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, কিন্তু যদি সেটি সরাসরি সঞ্চয়ে চলে যায়, তবে আপনি নিজেও টের পাবেন না, কিন্তু টাকা জমতে থাকবে।

৪. নিজের জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন

‘বছরে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করব’ – এটা শুনতে ভারী লাগতে পারে, কিন্তু যদি বলি – ‘প্রতি মাসে মাত্র ৮৩৩৩ টাকা জমাব’, তাহলে সেটা অনেক সহজ মনে হবে। এভাবে নিজেকে ছোট ছোট লক্ষ্য দিন। মোবাইলের নতুন সেট কেনা, ছয় মাস পর ঘুরতে যাওয়া, অথবা ঈদের গিফট কেনার জন্য টাকা জমানো – এসব হতে পারে আপনার প্রাথমিক সঞ্চয়ের অনুপ্রেরণা।

৫. অতিরিক্ত টাকা না থাকলেও সঞ্চয়ের অভ্যাস রাখুন

সবাই একসঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা জমাতে পারেন না, কিন্তু সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়তে টাকা বড় বিষয় নয়। আপনি যদি প্রতিদিন মাত্র ৫০ টাকা জমাতে পারেন, তাহলেই মাস শেষে হবে ১৫০০ টাকা। সেটা দিয়েই শুরু হোক আপনার আর্থিক স্বাধীনতার পথচলা।

৬. আর্থিক শিক্ষা নিন

বাংলাদেশে অনেকেই সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝেন না কারণ তারা অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বিষয়ে তেমন জানেন না। তাই আপনি যদি ইউটিউবে ‘পার্সোনাল ফাইন্যান্স বাংলাদেশ’ লিখে সার্চ করেন, বা ‘ঘরে বসে আয়’, ‘ইনভেস্টমেন্ট ফর বিগিনারস’ এরকম বই পড়েন, তবে আপনি নিজেই নিজের পরামর্শক হয়ে উঠতে পারবেন।

৭. ঋণমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন

সঞ্চয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ঋণ। বিজ্ঞাপন দেখে মোবাইল কিনে ফেলা বা প্রয়োজন না থাকলেও ইএমআইতে কিছু কেনা এসব ফাঁদ থেকে দূরে থাকুন। আগে ঋণমুক্ত হন, তারপর সঞ্চয়ে মনোযোগ দিন।

২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সটাই হলো জীবনের সেই সময়, যখন আপনি নিজের ভবিষ্যৎকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে পারেন। এখন থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি করুন। একটু কষ্ট হলেও ভবিষ্যতে সেটাই হবে আপনার সবচেয়ে বড় সহায়।

সঞ্চয় মানেই কেবল টাকাপয়সা জমিয়ে রাখা নয়, বরং নিজের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা গড়ে তোলা। আজ না হয় শুরুটা হোক। এক কাপ কম চা খেয়ে, সেই টাকাটা একটি মাটির ব্যাংকে রাখুন।