কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করুন সঠিকভাবে

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৬ জুন ২০২৫, ১০:৪৫ এএম
কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করুন সঠিকভাবে
ছবি : সংগৃহীত

কোরবানির মাংস দরিদ্র ও আত্মীয়-স্বজনদেরদের বিলিয়ে দেওয়ার পর নিজেদের ভাগের মাংস কিছুটা রান্না করা হলেও অনেকটাই বাসায় থেকে যায়। তবে থেকে যাওয়া এই মাংস সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ না করলে মাংসে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে স্বাদ ও গুণগত মান। তাই কোরবানির মাংস সঠিকভাবে সংরক্ষণের কিছু পদ্ধতি জেনে রাখা জরুরি।

জেনে নিন মাংস সংরক্ষণের কয়েকটি জরুরি টিপস্-

কাঁচা মাংস ফেলে রাখবেন না
প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে কোরবানির মাংস বাড়িতে আনার পর খোলা অবস্থায় অনেকক্ষণ যেন ফেলে না রাখা হয়, ৫-৬ ঘণ্টার মাঝেই তা সংরক্ষণ করতে হবে। তবে সেটা এমনভাবে করতে হবে, যেন মাংসের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।

নির্দিষ্ট সময় পরে রান্না করুন
পশু জবাই করার পর সঙ্গে সঙ্গেই রান্না করা বা ফ্রিজে রাখা যাবে না। কারণ, কোরবানির পর অন্তত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা মাংস শক্ত থাকে। মাংস একটু নরম হওয়ার পর ধুয়ে পানি ভালো করে ঝরিয়ে রান্না করতে পারেন এবং ফ্রিজে রাখতে পারেন। এতে মাংস রান্না করার পর সুস্বাদু হবে এবং ফ্রিজে রাখলেও দীর্ঘ সময় ভালো থাকবে।

মাংস সংরক্ষণের বেশ কয়েকটির পদ্ধতির মধ্যে ফ্রিজে রাখা, জ্বাল দেওয়া, রান্না করা ও রোদে শুকিয়ে রাখা অন্যতম। আমরা অনেকেই পদ্ধতিগুলো জানলেও সঠিক নিয়ম না জানার কারণে কোরবানির মাংস নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করুন সঠিকভাবে

ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ
১. মাংস রাখার জন্য জন্য ফ্রিজ আগেই পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং ফ্রিজের তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা চেক করতে হবে।

২. ফ্রিজে একই সঙ্গে যেমন মাছ ও মাংস রাখা যাবে না। জীবাণুর আক্রমণ ও ক্রস-কন্টামিনেশনের ঝুঁকি এড়াতে তেমনি কাঁচা ও রান্না করা মাংসও একসঙ্গে রাখা যাবে না। ।

৩. ফ্রিজে রাখার জন্য মাংস পরিমাণ মতো ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। তবে একদম ছোট টুকরো করলে ভেতরে পানি জমতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। ফ্রিজ করার আগে মাংসের রক্ত, চর্বি, পানি পরিষ্কার করে ঝরিয়ে নিতে হবে। এরপর ছায়াযুক্ত স্থানে ৩-৪ ঘণ্টা রেখে দিন যেন গাঢ় রক্ত নিঃসরণ হয় ও ঠান্ডা হয়।

৪. প্রয়োজন অনুসারে ছোট ছোট প্যাকেট করে রাখলে মাংস বরফ হবে তাড়াতাড়ি এবং ফ্রিজ থেকে বের করতেও সুবিধা হবে। এ ছাড়া পুষ্টিগুণও নষ্ট হবে না।

৫. হাড়সহ ও হাড় ছাড়া মাংস আলাদা করে প্যাকেট করাই ভালো। প্রতিটি অংশ আলাদা করে প্লাস্টিক ব্যাগ, জিপলক ব্যাগ বা ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে নিন। তবে প্যাকেট থেকে চেপে বাতাস বের করে রাখতে হবে। কারণ বাতাস ঢুকলে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিবে।

৬. অনেকে খবরের কাগজে মুড়িয়ে পলিথিনে ঢুকিয়ে মাংস ফ্রিজে রাখেন, তবে এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ খবরের কাগজের বিষাক্ত কালি মাংসের সঙ্গে মিশে যায়। এ ছাড়া কোনো অবস্থায়ই খোলা বাটি বা ট্রেতে মাংস ফ্রিজে রাখা যাবে না।

৭. মাংস ফ্রিজে রাখার আগে প্যাকেটের গায়ে তারিখ লিখে রাখুন। এতে মাংসগুলো কত দিন সংরক্ষণ করা হয়েছে বুঝতে সুবিধা হবে। আবার যদি প্যাকেটে কিসের মাংস, কোন অংশের মাংস তাও লিখে রাখা হয় তাহলে সহজেই বের করা যাবে।

৮. মাংস রাখার একদিন পর ফ্রস্ট ফ্রিজের ক্ষেত্রে প্যাকেটগুলো একটু নাড়াচাড়া করে দিতে হবে যেন শক্তভাবে না লেগে যায়। বেশি লোডশেডিং হলে আইস বক্স ব্যবহার করুন। এ ছাড়া ফ্রিজ বার বার খুলা যাবে না, এতে ঠান্ডা থাকবে না।

৯. কাঁচা অবস্থায় মাংস ডিপ ফ্রিজে মাইনাস ১৮ থেকে মাইনাস ২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে রাখতে হবে। এভাবে গরুর মাংস ৮-১০ মাস, খাসির মাংস ৫-৬ মাস, উট ও মহিষ ৬ মাস, এবং ভেড়া ২-৩ মাস রাখা যাবে। মাথা, মগজ ও কলিজা বেশি দিন ফ্রিজে রাখা উচিৎ নয়।

১০. তবে ১-৩ মাসের মাঝে সব কিছু অবশ্যই শেষ করা উচিত, কারণ যতদিন যাবে খাবারের গুণগত ও পুষ্টিগত মান ততই কমতে থাকে। এ ছাড়া কিমা করা মাংস ৩ মাস পর্যন্ত ডিপ ফ্রিজে থাকে। রান্নার জন্য প্রসেস করা কাঁচা মাংস নরমাল ফ্রিজের চিল্ড কম্পার্টমেন্টে ১-২ দিন রাখা যায়। এ জন্য চিল্ড কম্পার্টমেন্টের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি থেকে ৩ ডিগ্রিতে রাখতে হবে।

জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ

অনেক সময় ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজে জায়গা ফুরিয়ে গেলে টেনশনে পড়তে হয়। এসময় দুশ্চিন্তা না করে মাংসের কিছু অংশ রান্না করে বা জ্বাল দিয়েও সংরক্ষণ করতে পারেন।

জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ করা পুরোনো পদ্ধতি। ফ্রিজ ব্যবহারের আগে এই পদ্ধতিতে মাংস বেশি সংরক্ষণ করা হতো। এখনো এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তবে তুলনামূলক কম।

১. জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ করার জন্য চর্বির পরিমাণ একটু বেশি থাকাই ভালো। কারণ এতে মাংস দীর্ঘ সময় ভালো থাকে। মাংস আনার ৬-৭ ঘণ্টা পর লবণ ও হলুদ দিয়ে একটি বড় হাঁড়িতে মাংস ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে।

২. এতে মাংসের ভেতরের অন্যান্য জীবাণু মরে যায়। এভাবে গরমকালে ১২ ঘণ্টা এবং শীতকালে ২৪ ঘণ্টা মাংস ভালো থাকে। মাংস ফোটানোর পর অবশ্যই ভালোভাবে ঠাণ্ডা করে ঢেকে রাখতে হবে।

৩. সিদ্ধ করার আগে মাংসের টুকরো কাঁটাচামচ বা ছুরি দিয়ে কেঁচে লবণ ও লেবুর রস বা ভিনেগারের মিশ্রণে ডুবিয়ে নেওয়া ভালো। এতে ৫-৬ দিন মাংস ভালো থাকবে। তবে প্রতিদিনই নিয়ম করে জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে রাখতে হবে।

রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ

রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ করা এটা প্রাচীন একটা পদ্ধতি। তবে এখনো অনেকেই শখ করে এভাবে মাংস সংরক্ষণ করেন।

১. রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ করতে হলে প্রথমেই চর্বি ছাড়া মাংস বেছে নিতে হবে। এরপর মাংস পরিষ্কার করে ধুয়ে পাতলা ছোট টুকরা করে নিয়ে একটি লম্বা তারে একটার পর একটা মাংস গেঁথে নিতে হবে। কাপড় শুকানোর মতো করে ছাদ, বারান্দা, বা খোলা জায়গায় গাঁথা মাংস টানিয়ে রাখতে হবে।

২. ছাদ বা খোলা জায়গায় মাংস শুকাতে হলে পাতলা কাপড় বা নেট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এতে ধুলোবালি পড়ে মাংস নোংরা হবে না। তবে অবশ্যই কড়া রোদে বেশ কয়েকদিন শুকাতে হবে। মাংসের ভিতরে ভিতরে পানি থাকলে কয়েকদিন পরে নষ্ট হয়ে যাবে।

৩. মাংস একদম শুকিয়ে শক্ত হলে মুখ বন্ধ করা পাত্রে বা টিনের কৌটায় মাংস করে ভালো করে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে। তবে মাঝে মাঝে কৌটাসহ মাংস রোদে দিতে হবে। তাহলে পোকার আক্রমণ হবে না। এই পদ্ধতিতে মাংস দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।

৪. রোদে শুকানো মাংস রান্না করার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে মাংস নরম হবে।