ক্ষমা চাওয়ার সঠিক উপায়

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৭ মে ২০২৫, ০২:১৭ পিএম
ক্ষমা চাওয়ার সঠিক উপায়
ছবি : সংগৃহীত

আমাদের সমাজে ক্ষমা চাওয়াকে অনেকেই দুর্বলতার লক্ষণ বলে মনে করেন। বিশেষ করে কর্তৃত্বপরায়ন মানসিকতার কারণে অনেকেই ভুল স্বীকার করতে চান না। অথচ ক্ষমা চাওয়া আসলে একটি সাহসের কাজ। ব্যক্তি হিসেবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ এটি।

দূরদেশ অস্ট্রেলিয়াতে আজকের দিনটি (২৬ মে) পালিত হয় জাতীয় সরি ডে বা ক্ষমা চাওয়ার দিন হিসেবে। আমাদের সংস্কৃতিকে এমন কোনো দিবস না থাকলেও ভুল করা আর ক্ষমা চাওয়া সবার জীবনেরই বাস্তবতা। তবে শুধু ‘সরি’ বলে দিলেই কি ঠিকঠাক ক্ষমা চাওয়া হয়? আপনার কথা বা কাজে যদি কেউ কষ্ট পায়, তা কি একটা সরি দিয়ে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব? না, তবে সঠিক ভাবে নিজের ভুল স্বীকার করলে ছোট ছোট কষ্টগুলো আপনার সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারবে না। তাই আজকে এই সরি ডে-তে জেনে নিন সঠিক ভাবে ক্ষমা চাওয়ার উপায়-

১. প্রথম ধাপ উপলব্ধি
সাময়িক পরিস্থিতি ম্যানেজ করার জন্য সরি বলা একটি প্রচলিত অভ্যাস। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই শুধু বলার জন্য সরি বলেন, মন থেকে ক্ষমা চান না। তাই সঠিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার প্রথম ধাপ হলো আত্মোপলব্ধি। নিজের কাছে আগে স্বীকার করতে হবে যে ‘আমি ভুল করেছি’। ঠিক কোন আচরণটা করা ঠিক হয়নি, সেটা বুঝতে পারা খুব জরুরি। কাছের কেউ কষ্ট পেলে তাৎক্ষণিক ক্ষমা চেয়ে ফেলা আমাদের চরিত্রের অংশ। এবং এটা জরুরিও বটে। তবে মন থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য নিজেকে প্রশ্ন করুন যে আপনার আচরণের কারণ কী ছিল, এই কথাটি অন্য কীভাবে বলা যেত, বা আদৌ বলা উচিত কি না।

২. আন্তরিকতা থাকা চাই
আপনি যখন নিজের ভুল উপলব্ধি করবেন, তখন আপনার মধ্যে সমানুভূতি তৈরি হবে। ফলে আপনি যখন সামনের জনের কাছে ভুল স্বীকার করবেন, তখন আপনার কথার আন্তরিকতাতে অনুতাপ প্রকাশ পাবে। মুখে ‘সরি’ বা ‘ক্ষমা করে দাও’ না বললেও আপনার মনের কথা সামনের জন ঠিকই বুঝতে পারবেন।

৩. অজুহাত নয়, দায়িত্ব নিন
ক্ষমা চাওয়ার পর নিজের আচরণের পক্ষে অজুহাত দিবেন না। ভুল করে থাকলে ভুলের দায়িত্ব নিন। হঠাৎ রেগে যাওয়া বা আগে থেকে মন খারাপ থাকাসহ বিভিন্ন কারণে আপনার কথায় আরেকজন কষ্ট পেতে পারে। কিন্তু ভুল স্বীকার করার সময় সেই কারণের ওপর জোর দিবেন না। শেয়ার করার জন্য পরবর্তীতে জানাতে পারেন যে কেন আপনি ভুলটি করেছেন। তবে সেটি ক্ষমা চাওয়ার অংশ বানাবেন না। এতে সামনের জনের কাছে মনে হবে যে আপনি নিজের সাফাই গাইছেন।

৪. শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করুন
একই ধরনের ভুল বারবার করা ও সরি বলার অভ্যাস আপনার প্রতি অন্যের অবিশ্বাস বাড়িয়ে দিবে। তাই কোনো বিষয়ে ভুল স্বীকার করার পর তা শুধরানোর চেষ্টা করতে হবে। আপনার পরিবর্তিত আচরণেই আপনার দায়িত্বশীলতা প্রকাশ পাবে।

৫. সময় দিন
মনমালিন্যের পর পরই আপনার ক্ষমা চাওয়ার উত্তরে যদি সামনের জন স্বাভাবিক হতে না পারেন, তবে বুঝে নিবেন সে বেশি কষ্ট পেয়েছে এবং তার সময় প্রয়োজন। মাফ করার জন্য জোরাজোরি করবেন না। বরং একটু ধৈর্য ধরুন। ক্ষমা চাওয়ার পর অন্যজনের অনুভূতিকে সম্মান করুন।

বন্ধু-বান্ধব, ভাই-বোন, বাবা-মা, এমনকি সন্তান – সবাইকেই আমরা কখনও না কখনও কষ্ট দিয়ে ফেলি। সেই কষ্টগুলোতে ধামাচাপা দিয়ে ফেললে সম্পর্কে একসময় দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। তাই কষ্টের কথাগুলো অপ্রিয় হলেও এগুলো নিয়ে আলোচনা করা জরুরি। সঠিক উপায়ে অনুতপ্ত হোন। এভাবেই সম্পর্কগুলো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে আপনার আচরণ থেকে আপনার সন্তান শিখবে যে, ভুল করে ফেললে কী করতে হয়। কীভাবে সেই পরিস্থিতিকে সামাল দিতে হয়।

তাই ভুল করলে বা কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেললে সঠিক উপায়ে ক্ষমা চান, সম্পর্কগুলোকে যত্নে রাখুন।